এজেন্টদের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতকারী ৩ নগদকর্মী লাপত্তা

ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা-নগদ’র ৫ এজেন্টের কাছ থেকে ২ কোটি ৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বেশি কমিশন দেওয়ার টোপ দিয়ে লেনদেন বাড়ানোর জন্য এজেন্টদের চাপ দিয়ে ওই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ইতোমধ্যে ডিবি’র ফিন্যান্সিয়াল ইউনিট রাজধানী থেকে ওই চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। যাদের দুইজন স্বীকারোকক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তবে; প্রতারক চক্রের তিন মূল হোতা এখনো লাপাত্তা রয়েছে। তবে; গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এনিয়ে শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের অধীনস্থ ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা নগদের তিন কর্মচারী সম্প্রতি ৫ জন নগদ এজেন্টের কাছ থেকে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উচ্চ কমিশনের লোভ দেখিয়ে এরিয়া ম্যানেজার ফকরুল ইসলাম এবং টেরিটরি অফিসার জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও তানভীর এজেন্টদের লেনদেন বাড়ানোর জন্য টোপ ও চাপ দিয়ে আসছিলেন। সময় মতো টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে এই চক্র এজেন্টদের টাকা খরচ করে বিভিন্ন নগদ অ্যাকাউন্টে সেন্ড মানি করিয়েছেন।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, এই চক্র গুড হ্যান্ড ওয়ারিং মিলস থেকে ২০ লাখ টাকা, পিয়ারলেস থেকে ৫৫ লাখ টাকা, ক্যাশ-টি বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, বি কিউ ট্রেড থেকে ২৫ লাখ টাকা এবং ফিনেক্স ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
ডিবির ফিন্যান্সিয়াল ইউনিট ইতোমধ্যে এই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে এই বিষয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় মূল হোতা তিন নগদ কর্মীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়েরের পর থেকে তাদের তিনজনই পলাতক রয়েছেন বলে জানান ডিবির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে মহিদুল ইসলাম বলেন, নগদ এর যতবার খুশি লেনদেন করার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে অপরাধীরা। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটির উচিৎ তাদের ট্রানজেকশনের নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া, যাতে এমন অপরাধ সংঘটিত না হয়।
ভুক্তভোগীদের একজন গুড হ্যান্ড ওয়্যারিং মিলস এর ম্যানেজার কামরুল আশরাফ রানা বলেন, ‘গত ২২ জুলাই আমি ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন করেছি। পরে ধীরে ধীরে লেনদেন বাড়িয়েছি। কারণ সময় মতো তারা টাকা ফেরত দিয়েছিলো। এক কোটি টাকা লেনদেন করার পর নগদ থেকে লাভ হিসেবে আমি ১৪ হাজার কমিশন পাই। এর এক মাস পর আমি একদিন তাদের নির্দেশ মতো ২০ লাখ টাকা পাঠাই। তবে সেই টাকা আর ফেরত পাইনি। এক পর্যায়ে তারা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।’
অন্য ভুক্তভোগীরাও একই রকম ঘটনার শিকার। এই চক্র এজেন্টদের লেনদেন বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়, সেন্ড মানি করার জন্য নগদ গ্রাহকদের নম্বর হোয়াটসঅ্যাপ এর পাঠায়। প্রথম দিকে সময় মতোই টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। এরপর একদিন বড় অঙ্কের টাকা এজেন্টরা সেন্ড মানি করার পর প্রতারকরা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
আটক আটজনের মধ্যে মো. আল আমিন ও মো. মনির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মো. মনির জানান, তিনি সম্প্রতি রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় ২০ লাখ টাকায় একটি বাড়ি কিনেছিলেন, যদিও তিনি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পান।
এদিকে আল আমিন এর মাসিক বেতন ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি সম্প্রতি একটি ব্যায়বহুল হোটেলে ৩ লাখ টাকা খরচ করে তার সন্তানের জন্মদিন পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি কক্সবাজার সফরও করেছেন।