বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে গৃহবধুকে নির্যাতন, আটক দুই : ক্ষোভে ফুসছে মানুষ

এবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণে ব্যার্থ হয়ে ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে এনে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে এক গৃহবধুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে নির্যাতিতা গৃহবধু বাদী হয়ে ৯জনের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করেছে।

আটককৃতরা হচ্ছে- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলাল’র ছেলে  মো. রহীম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহীম’র ছেলে মো.রহমত উল্যাহ (৪১)।  এরমধ্যে রহিমকে রোববার বিকালে এবং রহমতকে রাত ১১টার দিকে আটক করা হয়।

গত ০২ সেপ্টেম্বর ঘটনার ঘটলেও একমাস পর রোববার (০৪ অক্টোবর) নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসে উঠে নোয়াখালীসহ গোটা দেশ। ক্ষমতা ও প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থাকা দুবৃত্তদের গ্রেফতারে সোচ্চার হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। জেলার নাগরিক সংগঠনগুলো সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ কর্মসূচীর ঘোষণা করেছেন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছেন- ন্যক্কারজনক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মাদক ব্যবসায়ী স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার নেতৃত্বে এলাকার, রহিম, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা।

এদিকে মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়- গত ০২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধরূ (৩৫) বসত ঘরে ঢুকে স্থানীয় বাদল ও তার সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক দল। এসময় তারা গৃহবধুর স্বামীকে  পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং শ্লীলতাহানি করে। এসময গৃহবধূ বাঁধা দিলে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে। 

স্থানীয় সূত্র আরো জানায়- ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে পুরো ঘটনা দীর্ঘদিন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে। 

রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২দিন পর  গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। এক মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই ধিক্কার জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।

সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে রোববার সাংবাদিকরা জয়কৃষ্ণপুর গ্রাম এবং গৃহবধুর বাড়িতে গেলেও দৃবৃত্তদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়নি। ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে পুলিশের। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আসামীদের ছবিও ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুকে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হারুন উর রশীদ মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের ৫টি ইউনিট ৭ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে দুই আসামি আটক করে। অপরদিকে, ভয়ে বাড়ি ছাড়া নির্যাতিতা গৃহবধূকে সদর উপজেলার মাস্টার পাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আটককৃত আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।



মন্তব্য লিখুন :