নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট থেকে একরামের প্রার্থীতা ঘোষণা
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন পেয়ে আগামি সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসন থেকে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। শুক্রবার কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুরের নিজ বাড়ির আঙিনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এসময় নেতাকর্মীরাও হাত তুলে সমর্থন দেন।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। গত একবছর ধরে এই আসনের রাজনীতি গোটা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে লন্ডভন্ড করে দেয়। নেতাদের পাল্টাপাল্টি লাইভে বক্তৃতা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। একে অপরের স্বরূপ উন্মোচনের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হন। নেতাদের কাদা ছোড়াছুড়িতে অনেক অজানা কথা বেরিয়ে আসে।
ইফতার অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বক্তব্য রাখেন একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কি হবে আমি জানি না, তবে যদি আপনারা চান তাহলে আমি নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) ও নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনের জন্য নমিনেশন চাইবো। জননেত্রী শেখ হাছিনা সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার কি ইচ্ছে করে না, আমার এলাকার মানুষকে ভালোবাসতে? এসময় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদেরকে ভালোবাসার জন্য দিছি, কই আপনারাতো ভালোবাসা দিচ্ছেন না? মানুষ কোথাও যেতে পারছে না, আজকে যে কোনো ছোটখাটো বিষয়ে মানুষ আসছে আমার কাছে, আমি অনেক সময় বিরক্ত হই, তবে আজ কথা দিচ্ছি আমি বিরক্ত দেখাবো না। কারণ; এ এলাকার মানুষ আজকে আমাকে প্রমাণ করে দিয়েছে ‘আয়রে একরাম আয়, নিজ ঘরে আয়’।
এমপি একরাম বক্তৃতায় বলেন, ‘কবিরহাট আমাদের এলাকা। আমরা কারও কাছে মাথা নত করে চলব না। ছাত্রলীগ, যুবলীগকে উঠে আসতে হবে। নেতৃত্ব দিতে হবে এই উপজেলাকে। নোয়াখালী আওয়ামী লীগে আজ দুর্দশা। এক প্যাকেট ইফতারিও কাউকে খাওয়াতে তারা পারেনি। আমার ভেতর অনেক কষ্ট। ২০০১ সাল থেকে রক্ত ক্ষয়ে ক্ষয়ে এই সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছি।’
প্রসঙ্গতঃ নোয়াখালী-৫ আসনে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয় সদর শ্লোগান নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ একরামুল করিম চৌধুরী স্বতন্ত্র ভোট করে পেয়েছিলেন ৪০ হাজারের বেশী ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওবায়দুল কাদের তখন বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ থেকে পিছিয়ে ছিলেন কবিরহাটের ভোট সেই ব্যবধান কমিয়ে মাত্র ১ হাজার ৩৭১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে নোয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একরামুল করিম চৌধুরী। ১২ হাজার ৭৫০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন চারবারের এমপি মোহাম্মদ শাহজাহানকে। এবং আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নানকে।
দীর্ঘ ১৬ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও অপ্রতিদ্বন্ধী ক্ষমতার কারণে অহংকারী করে তোলে একরামুল করিম চৌধুরী এমপিকে। স্বজন-ব্যাক্তিগত বন্ধুদের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এবং নানা অবস্থানে জায়গা করে দেয়াকে নিয়ে তোপের মুখে পড়েন তিনি। বসুরহাট পৌর মেয়র মীর্জা আব্দুল কাদেরের সাথে বিরোধে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন একরামু করিম চৌধুরী। সম্প্রতি তাঁর রাজসিক প্রত্যাবর্তনে সব সমীকরণ বদলে দিচ্ছে।