হাতিয়ায় রবিন্দ্র হত্যা এবং কিছু প্রশ্ন

রবিন্দ্র চন্দ্র দাস

মাঠের সাংবাদিকতা ছেড়েছি ৬বছর। বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই যখন নোয়াখালী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে তখন অনেক নামিদামি সাংবাদিকের সংবাদ পাঠের সুযোগ হয় অনলাইনে। মাঝরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই হঠাৎ চোখ আটকে যায় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য রবিন্দ্র চন্দ্র দাসের হত্যাকান্ডের খবরটি দেখে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে হত্যাকান্ডের স্থান হিসাবে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে একই ইউনিয়নের ‘চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদের বাড়ির সামনে’।

কোনভাবেই রবিন্দ্র চন্দ্র দাসের হত্যা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। একজন জনপ্রতিনিধিকে যদি নিজ ইউনিয়নে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবে দেখা জরুরী হাতিয়ার প্রশাসনের।

প্রশ্ন রাখার আগে একটু উল্লেখ করতে চাই নিহত রবীন্দ্রের নামে হাতিয়ায় বাহিনীর কথাও গণমাধ্যমে প্রচারিত আছে। গুগুলে সার্চ দিলে অসংখ্য সংবাদের লিংক ভেসে উঠবে কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনের পর্দায়। আর আব্দুল হালিম আজাদও ধোয়া তুলশি পাতা নন। মজার বিষয় হচ্ছে রবিন্দ্র এবং আজাদ দু’জনেরই রাজননৈতিক গুরু একজন।

এবার মাঝরাতে যে প্রশ্নগুলো কৌতুহল জাগায় সেটি হচ্ছে রবিন্দ্র খুন হয়েছেন বাংলাদেশ সময় ৯জুন দিবাগত রাত ২টা আর নিউইয়র্ক সময় ৯জুন বিকাল ৪টা। বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা এবং নিউইয়র্ক সময় ৯জুন দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত অনলাইনে যতগুলো সংবাদ পাঠের সুযোগ হয়েছে বেশীরভাগ সংবাদের বক্তব্য একই। রবিন্দ্র হত্যার যারা পরিকল্পনা করেছেন তাঁদের পরিকল্পনামাফিক গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে কিনা ? নাকি সময় স্বল্পতার কারণে সাংবাদিক বন্ধুরা তথ্য যাচাই-বিশ্লেষণ কিংবা একটু ভাষাগত পরিবর্তনের সুযোগটুকু নিতে পারেননি।

এবার আসা যাক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ প্রসঙ্গে- আব্দুল হালিম আজাদ চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলির ঘটনা ঘটলো। গুলি ও কুপিয়ে মারা হলো ইউপি সদস্য রবিন্দ্রকে আর সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা স্ববিস্তারে বর্ণনার জন্য বেঁচে রইলেন উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপিত আলআমিন। অথচ;আলআমিনের মটরসাইকেলেই ওছখালির বাসায় ফিরছিলেন রবিন্দ্র ! তিনি মটরসাইকেল চালানো অবস্থায়ই দেখেছেন কারা কারা গুলি করেছে ! রাত দুইটায় তিনি সবার চেহারা মনে রেখেছেন একে একে তিনি নির্ভূলভাবে নামগুলো বলেছেন সাংবাদিকদের।

ঘটনা বর্ণনার ভাষ্যমতে আলআমিন অক্ষত থাকলেন কিভাবে ? পুলিশ কতো দ্রুততার সাথে লাশ উদ্ধার করলো ? অথচ; আলআমিন সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করলেন কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার কার কথা কোন সংবাদে উল্লেখ করতে দেখিনি।

একটু ভেবে দেখা যেতে পারে হাতিয়ার ত্রাতাদের চক্ষুশূল হচ্ছেন চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদ। একসময়ে সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর বিশ্বস্ত হাতিয়া এই আজাদ। এখন সবচেয়ে বৈরী সম্পর্ক তাঁদের দুজনের মধ্যে। আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এটি কোন খেলা কিনা ?

আর রবিন্দ্র'র একটু ব্যাকগ্রাউন্ডও পাঠকদের জানানো জরুরী। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ আফাজিয়া বাজারে রবিন্দ্র বাহিনী গুলি করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং হাতিয়ার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক তালুক মিয়ার ছেলে আশরাফ উদ্দিনকে। ৯ এপ্রিল আশরাফ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। রবিন্দ্র কার লোক হাতিয়ার সবাই জানে। আর রবিন্দ্রকে গুলি করার দৃশ্যটি মটরসাইলকেল চালানো অবস্থায়ই দেখেছন শ্রমিকলীগ নেতা আলআমিন। অথচ; তিনি অক্ষত !

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করায়ত্ত করতে হাতিয়ায় এই খেলা অনেক পুরানো। খুব কাছ থেকে দেখেছি এই খেলা। সারাদেশের ন্যায় হাতিয়ার রাজনীতিরও রহস্যপুরুষ আছন...! তিনি খেলে যান অবিরাম। অবশ্য এখন সঙ্গে পেয়েছেন একসময়ের বৈরী প্রতিপক্ষকেও। মানুষের জীবন নিয়ে যাদের খেলার অভ্যাস একদিন তাঁদেরকেও একই খেলায় বলি হতে হয়। এবিষয়গুলোও মাথায় থাকা জরুরী।

একজন পাঠক হিসাবে এই প্রশ্নগুলো আমারা মনে জেগেছে। হয়তো অনেকের মনেই জেগেছে। তবে; আমার যুক্তির পক্ষে আমি সংবাদের লিংকগুলো আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে দিলাম। সেগুলো যাচাই করা দেখতে পারেন।


রবিন্দ্র হত্যা এবং একজন আলআমিনের ভাষ্য-

https://www.channelionline.com/%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%87%e0%a6%89%e0%a6%aa%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%a6%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%95%e0%a7%87/?fbclid=IwAR0qruS-2b9-RNaGCCS6oIZopYmak6V9tH0lmX4R1gSoo6puT8C3fUh1H_A

আশরাফ হত্যা এবং রবিন্দ্র বাহিনী-
https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81

মন্তব্য লিখুন :