নোয়াখালী মেডিকেলে করোনা নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন
আরটি-পিসিআর দিচ্ছে নোবিপ্রবি

অবশেষে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একাজে সহযাত্রী হিসাবে থাকছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। এই বিভাগের আরটি-পিসিআর মেশিন ব্যাবহৃত হবে নমুনা পরীক্ষায়। তবে; পরীক্ষার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে আরো কমপক্ষে তিন সাপ্তাহ। বায়ো সেফ্টি সিস্টেম বসাতে এই সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নোবিপ্রবিকে কাজে লাগিয়ে করোনা নমুনা পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এর প্রতি ফাইল নোট দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা নোয়াখালীতে সরকারি হিসেবে জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে প্রায় ১৮হাজার এবং শুধু মার্চ মাসেই প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি প্রবাসী নোয়াখালীতে প্রবেশ করে। এদের বেশিরভাগই ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। এনিয়ে আতংক ছড়ায় জেলা জুড়ে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাঝখানে কোন ল্যাব না থাকায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
এনিয়ে সক্রিয় হয় নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ ও চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পর্যাপ্ত লোকবল এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম থাকলেও করোনা সনাক্তকরণের জন্য আরটি-পিটিআর মেশিন না থাকায় বিপত্তি দেখা দেয়। একই সাথে প্রয়োজনীয় সরাঞ্জাম ও কীট দরকার পড়ে। এনিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবরে গত ৩১ মার্চ আবেদন করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম। বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করতে থাকেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালীর সভাপতি এবং কলেজের সহঃঅধ্যাপক কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. ফজলে এলাহী খাঁনসহ চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীতে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে ধরে।
গত ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস করোনায় আক্রান্ত রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে পূর্ণাঙ্গ বায়োলজিক্যাল ল্যাব স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরদিন ৮ এপ্রিল বুধবার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভ্যানশন-সিডিসি) চার সদস্যের একটি দল এ ল্যাব পরিদর্শন করেন।
এদিকে ৯ এপ্রিল নিজেদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ল্যাবে করোনা স্যাম্পল পরীক্ষার আগ্রহ দেখায় নোবিপ্রবি। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে এবং নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষকে পত্র লিখে।
যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম এবং স্বাচিপ সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে দেখা করেন। এসময় মহাপরিচালক করোনা পরীক্ষার অনুমোধন দেন।
কলেজ সুত্রে জানা যায়, মাইক্রোবায়োলজী বিভাগে নোবিপ্রবি থেকে এনে আরটি-পিসিআর মেশিন বসানো হলেও ল্যাবে যারা কাজ করবেন তাঁদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বায়ো সেফটি সিস্টেম খুবই জরুরী। সেটি বসানোর বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপাক ডা. নাসিমা বেগম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে; সম্পন্ন হতে তিন সাপ্তাহের মতো সময় লেগে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর প্রবাসে নোয়াখালীকে বলেন- নোবিপ্রবির নিজস্ব ল্যাব রয়েছে, দেশের এই ক্রান্তিকালে এটি ব্যাবহারের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবার সাথে যোগাযোগ করে। জেলাবাসীর যেকোনো প্রয়োজনেই নোবিপ্রবি পাশে থাকবে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালীর সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খাঁন প্রবাসে নোয়াখালীকে বলেন- ল্যাব চালু হলে শুধু নোয়াখালী নয় আশপাশে জেলার করোনায় সংক্রমিত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে; কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে কর্মরতদের সুরক্ষার জন্য “বায়ো সেফটি সিস্টেম” বসানো হলেই পরীক্ষা শুরু করা যাবে। পর্যায়ক্রমে কলেজে নিজস্ব আরটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। এজন্য তিনি জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক এবং সহযোদ্ধা চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে করোনা সানাক্তকারণের কীট আবিস্কাকারী দলের চারসদস্যের একজন নোবিপ্রবি'র মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীববিজ্ঞান) বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ।