ঘরোয়া চিকিৎসায়ই সুস্থ হয়েছেন ৮০ ভাগ রোগী
অস্থায়ী হাসপাতালের চিকিৎসায়ও সন্তুষ্ট আক্রান্তরা

ব্যবসায়ী আবু নাছের ও তাঁর স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রীর শরীরে করোনা ধরা পড়েছিল গত ২৭ মে। করোনার উপসর্গ হালকা জ্বর ও কাশি দেখা দিলে দুজনেই ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করত থাকেন। নমুনা পরীক্ষা করতে দিলে চার দিনের মাথায় ফলাফল আসে করোনা পজিটিভ। এবং একই পরিবারের আরও চারজনের। তাঁরা কেউই হাসপাতালে যাননি চিকিৎসা নিতে। নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার অর্জুনতলা এলাকার এই বাসিন্দারা সবাই করোনামুক্ত হয়েছেন বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে।
শুধু এই আবু নাছের দম্পতিই নয়, জেলায় সুস্থ হওয়া করোনা রোগীদের প্রায় ৮০ ভাগ সুস্থ হয়েছেন বাড়িতে থেকে ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। আর ২০ ভাগের মত রোগী সুস্থ হয়েছেন জেলা সদরের শহীদ ভুলু ষ্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড-১৯ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে। অস্থায়ী ওই হাসপাতালের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেখান থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরাও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
হাতের নাগালে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো একসময় মানুষ নিরাময় করতো। পরবর্তী ধাপ হিসাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয় এবং ওষুধ সেবন করতো। প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানগুলো ব্যাবহারের ক্ষেত্রে মানুষের বংশ পরম্পরায় লোকজ জ্ঞানই ছিলো পূঁজি। বাণিজ্য আর আধুনিকতার নামে সেই লোকায়ত জ্ঞান চর্চা ঝিমিয়ে গেলেও করোনাকালীন সময়ে মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। নোয়াখালীতে করোনা রোগীদের সুস্থতার হার তা প্রমান করে।
করোনা জয়ী ব্যবসায়ী আবু নাছেরের কন্ঠেও প্রতিধ্বণিত হলো ভেষজ উপাদানে চিকিৎসা ও সাহসের সাথে রোগ মোকাবেলার কথা। এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন- শুরু থেকেই মনোবল হারাননি। বাড়িতে সব সময় গরম পানি, আদা মেশানো রঙ চা পান করেছেন নিয়ম করে। পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা থেকেছেন, আর এক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেছেন। একই নিয়ম পালন করেছে পরিবারের অন্য সদস্যরাও। পরে ১৪ দিনের আইসোলেশন শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাঁদের করোনামুক্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এদিকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রামন শনাক্ত হয়েছে। যাঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬০৪ জন। এর মধ্যে শুধু বেগমগঞ্জ উপজেলাতেই সুস্থ হয়েছেন ২২৩ জন। এ ছাড়া সেনবাগে ৫৫ জন, চাটখিলে ৭৩ জন, সোনাইমুড়ীতে ৫৩ জন, নোয়াখালী সদরে ৯৪ জন, কোম্পানীগঞ্জে ১২ জন, কবিরহাটে ৬৯ জন, সুবর্ণচরে ১৯ জন ও হাতিয়ায় ৬ জন সুস্থ হয়েছেন।
সংক্রামনের শুরুর দিকে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কারণে জেলা পর্যায়ে করোনা হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কাজ করলেও পরে তাতে গতি আসে। গত ৩০ এপ্রিল যাত্রা শুরু শহীদ ভুলু ষ্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড-১৯ হাসপাতাল। গত ৫০ দিনে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ১৭০ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১১৪ জন। এর মধ্যে ১৭ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন গত বৃহস্পতিবার। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎধীন কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নেই।
হাসপাতালের সমন্বয়ক নিরুপম দাশ বলেন, একটি ষ্টেডিয়ামকে হাসপাতাল বানিয়ে রোগীদের এভাবে সেবা দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে শুরু থেকে সংশয়ের মধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। বরং দিনদিন চিকিৎসা সেবা আরও উন্নততর হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো রোগীকে এখানে বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে হয়নি। সুস্থ হয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে গেছেন সবাই।
নিরুপম দাশ বলেন, অবকাঠামোগত নানা সমস্যার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, নার্সসহ সকলে কাজ করেন। তিনি নিজে ঘর-সংসার সবই ছেড়ে দিয়েছেন, এই কোভিড হাসপাতালের জন্য। রাত দুইটা, তিনটা, চারটার সময়ও রোগীর ফোন পেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সেবা দিতে হয়। তিনি বলেন, এখানে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে এপর্যন্ত তিনজন চিকিৎসক, সাতজন নার্স ও তিনজন অন্য কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও এখন সুস্থ।
কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসায় করোনামুক্ত হওয়া পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা খুবই ভালো ছিলো। যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে তা তিনি পেয়েছেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি ছিলো না। তাই সুস্থতার জন্য তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন।
তথ্য সূত্র- প্রথম আলো।