"প্রশান্তি বাড়ায় কল্যাণচিন্তা"

প্রতিটি মানুষের গড়ন আলাদা। তাঁর চিন্তার ধরণও আলাদা। মানুষের তারতম্য ভেদে মানুষের চিন্তার এমন বৈচিত্র হওয়াই স্বাভাবিক। তবে; ইতিবাচক চিন্তা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। আর মনের প্রশান্তি বাড়ায় কল্যাণ চিন্তা। কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ‘র নিয়মিত আয়োজন সাপ্তাহিক সাদাকায়নে এমনটি তুলে ধরা হয়েছে যুক্তি এবং বাস্তবতার নিরিখে। ২০ জুলাই শনিবারি নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় সোসাইটির জামাইকাস্থ কার্যালয়ে “ধ্যানে কল্যাণচিন্তা মনের প্রশান্তি বাড়ায় " শীর্ষক আলোচনা উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের আর্ডেন্টিয়ার সাইফুল আলম।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষই যেহেতু আলাদা, তাই ভিন্ন ভিন্ন রকম চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেমন, একজন ব্যস্ত ব্যাবসায়ীর চিন্তা ব্যবসার মুনাফা নিয়ে, একজন গৃহিণীর চিন্তা তাঁর ঘর-সংসার-পরিজন নিয়ে। একজন অফিস কর্মকর্তার চিন্তা তাঁর অফিস নিয়ে, একজন শিক্ষার্থীর চিন্তা পড়াশুনাসহ নিজেকে তৈরী করার আরো খুঁটিনাটি নিয়ে। এমনকি একটি শিশুরও চিন্তা আছে। তার চিন্তার বেশিরভাগ জুড়েই থাকে তাঁর খেলনা। তার মানে আমরা কেউই চিন্তার বাইরে নই। কারো চিন্তা আশাবাদী, কারো চিন্তা নৈরাশ্যের। কারো চিন্তা ইতিবাচক, কারো চিন্তা নেতিবাচক। কারো চিন্তা গঠনমূলক, সৃজনশীল আর কারো চিন্তা ধ্বংসাত্মক। এই চিন্তার মাধ্যমে আমরা আমাদের যুক্তিসঙ্গত চাওয়া গুলি পেতে চাই। সুখ চাই, শান্তি চাই, সাফল্য চাই, ভালো রেজাল্ট চাই, আনন্দময় কাজ এবং আত্মিক শান্তি চাই। সবশেষে করুনাময়ের নৈকট্য চাই।
এই চাওয়াগুলো পাওয়ার জন্যে ইতিবাচক হতে চাই। যদিও বেশিরভাগ মানুষই নেতিচিন্তাটাই আগে করেন। যেমন ধরুন- রাত ১২টার দিকে ফোন এলে ধরার আগেই আমরা ভাবি কোনো দুঃসংবাদ না তো ? দেখা গেলো, ফোনের ওপাশে নবজাতকের কান্নার শব্দ। মানে একজন মানুষ এই মাত্র পৃথিবীতে এসেছেন। এটা তো সুসংবাদ। গবেষকরা বছরের পর বছর তাদের পর্যবেক্ষণ কে দেখেছেন যে, গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক চিন্তা, ভালো কথা, মেডিটেশন, এবং পুরোটা সময় একটি সুস্থ, ফুটফুটে সন্তানের চিন্তা মায়ের শরীরে আনন্দবর্ধক হরমোন এন্ডোরফিনের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। এবং এই মায়েদের সন্তানেরা হয়ে উঠে মেধাবী, আত্ম-প্রত্যয়ী ও সাহসী।
ঘটনা যা-ই ঘটুক, আগে যেন ইতিবাচক চিন্তাটাই মনে আসে সেজন্যে প্রয়োজন ধ্যান বা মেডিটেশন। কারণ, মেডিটেশনের সময়টাতে আমরা মনকে অনেকগুলি ইতিবাচক কথা শোনাই। বার বার একই বাণী যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে ভালো থাকার একটা তরঙ্গ তৈরী হয়। নিউরোসায়েন্টিস্টরা দীর্ঘ পরীক্ষায় দেখেছেন, যখনই মস্তিষ্কে নতুন তথ্য যায়, নতুন ডেনড্রাইট অর্থাৎ নিউরোন থেকে নিউরোনে নতুন সংযোগ পথ তৈরী হয়। ক্রমাগত একই তথ্য যেতে থাকলে মস্তিষ্কের কর্মকাঠামো বদলে যায়। মস্তিষ্ক তখন নতুন বাস্তবতা সৃষ্টিতে কাজে নেমে পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ইতিবাচক চিন্তাগুলো ধ্যানের স্তরেই করতে হবে কেন? কারণ উত্তেজিত মুহূর্তে যুক্তি আমাদের মধ্যে কাজ করে না। তাই মেডিটেশনে ধ্যানের প্রশান্ত স্তরে আমরা সচেতনভাবে নিজের ও অন্যের জন্যে সুচিন্তা করার সুযোগ পাই। তখন নিজের ও অন্যের কল্যাণচিন্তা ছাড়া আর কোনো কিছু মনে আসার সুযোগ থাকে না।
পরম করুনাময় আমাদের প্রশান্ত থাকার সুযোগ দিন এবং এই প্রশান্তিকে আরো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিন- এই প্রার্থনা করে তিনি আলোচনা শেষ করেন। প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানটি অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৫টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের অতিথি প্রোগ্রামটিতে অংশ গ্রহণ করেন ।
আগামি ২৭জুলাই'১৯ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট , সুইট # বি ই, জ্যামাইকা কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়নে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আগামী সপ্তাহে থাকছে পরিবারকে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায় সেই বিষয়ের উপর বিশেষ প্রোগ্রাম "আলোকিত পরিবার কাযক্রম"।