গ্রীষ্মকালীন সব্জি আবাদের প্রস্তুতি
নিউইয়র্কের দোকানে দোকানে চারার পসরা
গতবছর চারটা লাউ গাছ লাগিয়েছিলাম। সবগুলোতে মোট ৬০টা লাউ ধরেছিলো। অন্যান্য সব্জিতো ছিলোই। তখন ব্যাক ইয়ার্ডে মাটিতে লাগিয়েছি এবার টবে লাগাবো তাই নিলাম। লাউ’র পাশাপাশি থাকবে নানান জাতের সব্জিও। শখের বসে হলে পুরো সামার জুড়ে নিজেদের উৎপাদিত তাজা সব্জিতো খেতে পারি। উৎসাহ নিয়ে নিমিষেই কথাগুলো বলে যেনো তৃপ্তি পেলেন প্রৌঢ়া নাসরিন আক্তার।
নিউইয়র্ক সিটির ওজন পার্কের আব্দুল্যাহ সুপার মার্কেটে লাউ চারা পরখ করছিলেন তিনি (নাসরিন আক্তার)। পরিচয় দিয়ে নাম এবং অনুভূতি জানতে চাওয়ার পর বললেন- এখানে কতটুকু উৎপাদন হলো তা বিবেচ্য নয়। ভালো লাগা থেকে আঙিনায় সব্জিচাষ করেন, নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী-স্বজন ও ভাড়াটেদের দিতে পারেন। এতে খুশি লাগে।
শুধু নাসরিন আক্তারই নয় আঙিনায় গ্রীস্মকালীন সব্জি আবাদ নিয়ে বাঙালী গৃহস্থদের (বাড়ির মালিক) এখন ব্যস্ততা উর্বর মাটি কিনে জমি (বেড) তৈরী, বীজ তলা তৈরী কিংবা চারা সংগ্রহ নিয়ে। কেউ আগাম বুনেছেন নানান জাতের শাক।
নিউইয়র্কের প্রকৃতিতে বসন্ত দোলা দিচ্ছে কিছুটা দেরী হলেও। বাঙালী-অবাঙালী মিলিয়ে বাড়ির আঙিনায় বেশীরভাগ বাড়ির মালিকই নানা বাহারী ফুলের পাশাপাশি সব্জির চাষ করে থাকেন। তবে এশীয় মধ্যেই এপ্রবণতা বেশী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নানান জাতের শাক ফলানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া আবাদ করা সব্জি তোলা যায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ঘুরে দেখা গেছে- হোম ডিপো ছাড়াও এলাকায় এলাকায় গ্রোসারিগুলোতে মিলছে উর্বর মাটির বস্তা। গাছ লাগানোর বেড তৈরী কিংবা টবে ব্যবহৃত হবে এসব মাটি। নানান জাতের শাক এবং সব্জির বীজও বিক্রি হচ্ছে। একইসাথে চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে এলাকার গ্রোসারিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নানান সব্জির চারা। বিক্রি এবং চারা তৈরীতে ব্যাস্ত থাকতে দেখা গেছে দোকানিদের। মৌসুমী ব্যবসা হিসাবে এখন স্থানীয় বাঙালী গ্রোসারিগুলোও এ সুযোগ লুফে নিচ্ছে। বিপুল সংখ্য চারার পসরায় সুবুজ হয়ে উঠছে কোন কোন গ্রোসারি। এদিকে গাছ লাগানোর পর অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিনও একই সাথে বিক্রি করছেন দোকানিরা।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস্, জ্যামাইকা, সাউথ জ্যামাইকা, এলমহার্স্ট, এস্টোরিয়া, ওজনপার্ক, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ইস্ট নিউইয়র্ক, পার্কচেস্টারসহ বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলোর গ্রোসারিগুলোতে এখন চারার পসরা। দেশী লাউ, শিম, বিভিন্ন জাতের বেগুন, টমেটো, বরবটি, মরিচ, সিলেটি নাগা মরিচ, শসা, সাজনা, করোলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের সব্জির চারা বিক্রি হচ্ছে ২ ডলার থেকে ৫ ডলার দামে। বিক্রি হচ্ছে দেশীয় সব্জির বীজও। মাটির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৬ ডলারে। শনিবার ছুটির দিনে গ্রোসারিগুলোতে দেখা গেছে গৃহস্থ্য ক্রেতাদের ভীড় । নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের পাশাপাশি পছন্দের চারাও নিচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। যাদের বেশীরভাগই নারী।
গৃহস্থ্য এবং দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়- মওসুমের এই সময়ে জমি তৈরীর পর লালশাক, ধনিয়া, মুলাশাক, পালং শাক (স্পিনাশ), ডাটাশাক, পাটশাকসহ পছন্দের শাক দিয়ে আবাদ শুরু হয়। এই ফাঁকে বীজতলা তৈরী কিংবা চারা গাছ কিনে এনে লাগানো হয়। শুধুমাত্র দেশীয় স্বাদের সব্জিই নয় এদেশীয় সব্জির চারাও লাগান গৃহস্থ্যরা নিজেদের পছন্দ অনুসারে। একটা-দুইটা গাছ করেও কেউ কেউ ১৫-১৬ জাতের শাক-সব্জি আবাদ করে থাকেন। সবেমাত্র শুরু হয়েছে, সময় গড়ানোর সাথে সাথে গ্রোসারিগুলোতে নানান জাতের কুমড়া, ঢেরস, কচু, গ্রীনপেপার, রেডপেপার, লংচিলিসহ নানান জাতের চারার সমাহার ঘটবে।
আছে তুলশি’র চারাও-
তুলশিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাংগাল উপাদান। এছাড়াও নানান ঔষুধীগুনের জন্য তুলশি গাছের পাতা, বীজ ও বাকলের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। কাশি, শ্বাসকস্ট, সর্দিজস্বর, হাঁপানি, ফুসফুসের দুর্বলতার মতো করোনা উপসর্গ মোকাবেলায় প্রাথমিকভাবে এই ভেষজের ব্যাবহার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই ক্রেতা বেড়েছে তুলশি’র চারারও। এমনটি শোনা গেলো চারা বিক্রেতার কন্ঠেও। ছোট আকৃতির প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫ ডলার দামে।
ওজন পার্কের জারা গ্রোসারির মালিক আব্দুল হান্নান জানালেন ওষুধি গাছ হিসাবে তুলশির চাহিদা থাকায় এবারই প্রথম তিনি তুলশির চারা তুলেছেন, বিক্রিও হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের সব্জির দুই’শরও বেশী চারা উৎপাদন করেছেন তিনি। পাশাপাশি নার্সারি থেকে অনেক চারা কিনে এনেছেন ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায়। মওসুম পুরোদমে শুরু হলে সব্জির জাত অনুসারে চারা উৎপাদন আরো বাড়াতে হতে পারে। করোনার ছোবলের কারণে গতবছর কিছুটা সব্জি আবাদ কম ছিলো। এবছর চারার চাহিদা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।