ডেলিভারি : অকালে ঝরে গেলো আরেক তরুণ প্রাণ

জীবনের ঝুঁকিকে জয় করলেও জীবিকার ঝুঁকি এড়াতে পারেনি তারেক

নিহত বাইকার তারেক আজিজ। ছবি-সংগৃহীত।

অকালে ঝরে গেলো আরেকটি তরুণ প্রাণ। চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে মারা যান বাইকার তারেক আজিজ (২৬)। গত ২৩ আগস্ট নিউইয়র্ক সময় সোমবার দিবাগত রাতে (মঙ্গলবার প্রথম প্রহর) সময়ের আলোচিত পেশা ফুড ডেলিভারি দিয়ে বাসায় ফেরার পথে দ্রুতগামী কোন যানবাহনের ধাক্কায় আহত হয়ে পড়ে থাকেন তিনি। দ্রুত পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে ব্রুকডেল হসপিটালে ভর্তি করে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শুক্রবার বিকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে সদা হাস্যোজ্জল তারেকের মৃত্যুর খবর। ভাই, স্বজন, সমবয়সী এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। তিন বছর পূর্বে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হাঁটা পথে (বাইরোড) যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি। জীবনের ঝুঁকিকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যৎ গড়তে এসে জীবিকার ঝুঁকি এড়াতে পারেননি তরুণ তারেক আজিজ।

খবর পেয়ে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি তাজু মিয়াসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তারেক’র ভাই রুবেল উদ্দিন, মামা নাজমুলসহ আত্মীয় ও সহপাঠিরা উপস্থিত চিলে। হাসপাতাল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রকৃয়া শেষে লাশ গ্রহণের পর নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ দেশে প্রেরণ করা হবে। জানাজার নির্ধারিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

নিহত তারেকের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আতর মিয়া হাজী বাড়ির (লোকমান মেম্বারের বাড়ি) নুরুল আমিনের ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তাঁরা দুই ভাই নিউইয়র্কে থাকেন। 

বাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়- নানা পেশায় হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও অপেক্ষাকৃত কম মুজুরিসহ নানা বৈষম্যের কারণে গত কয়েক বছর থেকে নিউইয়র্কে বাইকে ফুড ডেলিভারি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণদের মাঝে। একদিকে স্বাধীন পেশা, অপরদিকে আয়ও ভালো। তবে; অধিক আয়ের নেশা, সচেতনতার অভাব এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা কম থাকার কারণে প্রায়ই দূঘটনার কবলে পড়ছে বাইকাররা। তারওপর বিদ্বেষপ্রসূত হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে থাকে। তারপরও ডেলিভারি পেশায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

স্বজনরা জানায়, নিহত তারেক আজিজ থাকতেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ইস্ট নিউয়র্কের ইউক্লিড এলাকায়। বাই সাইকেলের চেয়েও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্কুটারে করে ফুড ভেলিভারির কাজ করতে তারেক। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। চুড়ান্ত শুনানীর অপেক্ষায় ছিলো তাঁর মামলাটি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ক ফারমিটসহ আনুষাঙ্গিক অন্যসকল বৈধ কাগজপত্রও ছিলো তাঁর।

প্রতিদিনের মতো সোমবারও (২৩ আগস্ট) ডেলিভারি কাজে বের হয় তারেক। রাত ১২টর পর ব্রুকলিনের ফাউন্টেন এভিনিউ এবং সি-ভিউ স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে তাঁকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ছোটভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রুবেল উদ্দিন জানান- তিনি কিছুটা অসুস্থ, ঠিকভাবে কাজও করতে পারেন না। অথচ; ছোটভাই তারেক ছিলো উদ্যোমী এবং ছটপটে। সেই ভাই এখন আর নেই। তাঁর মতে পুলিশ অচেতন অবস্থায় তারেককে উদ্ধার করলেও পরিস্থিতি দেখে সবাই বলছে এটা দ্রুতগামী কোন যানবাহন তাঁকে ধাক্কা দিকে পালিয়ে যায় (হিট এন্ড রান)।

নিহতের মামা নাজমুল জানান, প্রয়োজনীয় প্রকৃয়া সম্পন্ন শেষে জানাজার সময় ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হবে সবাইকে। পরবর্তীতে মরদেহ দেশে প্রেরণ করা হবে।

প্রসঙ্গত : গত ৮ জুলাই (২০২১) ম্যানহাটনের ডাউনটাউনের ব্যাস্ততম ইস্ট হিউস্টন ও ক্লিন্টন স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে দ্রুতগামী কারের ধাক্কায় নিহত হন বাইকার বরকত উল্যাহ মুন্না (২৩)। তাঁর বাড়ি ছিলো নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার দেউটি ইউনিয়নের নবগ্রাম গ্রামে। দেড় মাসের ব্যবধানে কমিউনিটি হারিয়েছে আরেক তরতাজা প্রাণ তারেক আজিজকে।

মন্তব্য লিখুন :