স্বপ্নের সাথে বয়ে আনা তারুণ্যের উচ্ছ্বাস
নাঈম, মেহেদী, প্রিন্স, সৌরভ, সাজু, রুবেল, টিটু, খলিল, বাবলু, শ্যামল, রাজু, শান্ত, বাবন, ফরহাদ, নোমান, জয়, ফরহাদদের অনেকের এখনো মনন-মগজ থেকে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে ফুটবল অথবা ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকা, চড়–ইবাতি কিংবা দলবেঁধে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দের রেশও কাটেনি। নিউইয়র্কের ফুটপাত ধরে হাঁটতে, হাঁটতে এখনো কেউ কেউ দ্রুতগতির পেস অথবা যাদুকরি স্পিন আক্রমন শাণিত করেন বল ছাড়াই। কেউ ছক্কা হাঁকান আকাশ পানে। হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনিও তাঁদের উচ্ছ্বাস কেড়ে নিতে পারেনি। এরকম প্রায় ছয় শতাধিক তরুণ-যুবকদের মিলন মেলা বসেছিলো নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের প্রসপেক্ট পার্কে।
গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বারবিকিউ পার্টি, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, শুভেচ্ছা বিনিময় এবং র্যাফেল ড্রতে মেতে ছিলো তাঁরা। অংশ নেয়া তরুন-যুবদের বেশীরভাগই ছিলো নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গৌরবগাঁথা জনপদ গোপালপুরের বাসিন্দা। এমন মিলন মেলার আয়োজন করে গোপালপুর ক্লাব-ইউএসএ। সংহতি জানাতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উৎসাহ যুগিয়েছেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, সেক্রেটারি জাহিদ মিন্টু, সাবেক সেক্রেটারি তাজু মিয়া, চাটখিল সোসাইটির সভাপতি মাঈনুল উদ্দিন মাহবুব, সেক্রেটারি ছালেহ উদ্দিন রুবেল, বিএনপি নেতা মিল্টন ভূঁঞাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সোনালী ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মার্কিন মুল্লুকে এসেছেন এই তরুন-যুবকরা। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে একইভাবে আসা তরুনদের মতো বাংলাদেশের তরুন-যুবরাও যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার পর শুরু করতে হয় এক অচেনা জীবন সংগ্রামে। আগতদের সবাই স্বপ্নের টানে আসেননা, বিপুল সংখ্যক আসেন রাজনৈতিক নিপিড়নে টিকতে না পেরেও। ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসা তরুন-যুবকরাও সংগ্রাম করতে হলেও মানসিক উদ্বেগ বহন করতে হয়না তাঁদের। এতোকিছুর পরও সময় করে কিংবা অবসরে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতেই মিলন মেলায় তাঁরা যোগ দিয়েছেন, এলাকার সবার সাথে দেখা হয়। অনেক পরিচিতজন, স্বজনদের সাথে দেখা হয় বাৎসরিক এই আয়োজনে। এমনটিই শোনা গেছে আগত একাধিক তরুনের কন্ঠে।
প্রসপেক্ট পার্কের টেনিস কোর্টের পাশে মিলন মেলার সূচনা হয় দুপুর ১২টার দিকে। একে একে ভীড় বাড়তে থাকে, দুপুর গড়িয়ে বিকালে মিলন মেলা পরিণত হয় সমাবেশে। শুধু গোপালপুরের তরুন-যুবকরাই নয়, বয়োজ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি আশপাাশের এলাকা ছাড়িয়ে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুন-যুবকরাও এসেছেন বন্ধুত্বের টানে। প্রীতি ফুটবল ম্যাচও ছিলো যথেষ্ঠ প্রাণবন্ত। সবচেয়ে জমজমাট ছিলো র্যাফেল ড্র। ১৩টি পুরস্কারের বিপরীতে প্রায় ১ হাজার টিকেট বিক্রি হয়। সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় র্যাফেল ড্র’র প্রতিটি পুরস্কার ঘোষণার সাথে সাথে তরুণদের শোরগোলে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো পার্ক।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো সময় জুড়ে ছিলো বারবিকিউর নানা আয়োজন, খাবার বিতরণে স্বেচ্ছসেবীরা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে ছিলো ফ্রি কভিড টেস্টের ব্যবস্থা। আয়োজনে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে আল-আমিন ইসলামী ফাউন্ডেশন এবং রেন্ডি ডি সাইগাল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
স্বপ্নের সাথে দেশ থেকে বয়ে আনা তারুণ্যের এই উচ্ছ্বাস বাঙালীর চিরায়ত চেহারা। নিউইয়র্কের দ্রুত পরিবর্তনশীল চাকরি কিংবা ব্যবসার পরিসরে মানিয়ে নেয়া এই তরুণদের অনেকেই মিলন মেলায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন শেকড়ের টানে। যাদের বেশীর ভাগই ছিলেন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী। বেঁচে থাকলে অনেকের সাথে আবার দেখা হবে আগামি বছরের মিলন মেলায়- বিদায় বেলায় সবার কন্ঠে ছিলো এমন আকুতি। র্যাফেল ড্র শেষ হওয়ার পর ভাঙে মিলন মেলা। বিদায় জানানোর সময় সংগঠনের সভাপতি প্রিন্স, সেক্রেটারি বাবলুসহ বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দের কন্ঠও যেনো ভারী হয়ে উঠছিলো।
গোপালপুর ক্লাবের এই মিলন মেলার প্রধান সমন্বয়কারী সালাউদ্দিন রুবেল জানান- সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই তাঁরা এমন মিলন মেলার আয়োজন করে থাকেন। বারবিকিউ পার্টি উপলক্ষ হলেও মূলতঃ নিউইয়র্কসহ আশপাশে স্টেট থেকে এলাকার সবাই আসার একত্রিত হওয়ার একটা সুযোগ তৈরী হয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এলাকার বিপুল সংখ্যক তরুনের আগমন ঘটেছে। এখানে তাঁরা প্রায়ই ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানান খেলাধুলা ও টুর্ণামেন্টে অংশ নিয়ে থাকে। গত মঙ্গলবারের মিলন মেলায় গোপালপুর ছাড়াও আশাপাশে এলাকাসহ বিপুল সংখ্য আমন্ত্রিত অতিথিসহ ছয় শতাধিক অংশগ্রহণকারী ছিলেন মিলন মেলায়।