পৃথিবী চেনার আগেই পিতার হত্যার বিচার দাবির মঞ্চে লাবিব

চার বছরের লাবিব খন্দকার। এখনো দুনিয়ার কোন পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। রোজকার কর্মযজ্ঞ যার কাছে অপরিচিত। বাবা-মা’র  স্নেহ, খেলনা যার কাছে সবচে প্রিয়। পৃথিবী চেনার আগেই পিতার হত্যার বিচারের দাবির মঞ্চে হাজির হতে হয়েছে তাঁকে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হু ইজ মুদাচ্ছির? আওয়ার ব্রাদার? নো গান ভায়োলেন্স-শত শত শোকার্ত মানুষের এমন অসংখ্য মুহুর্মুহু শ্লোগান দেখছে চোখের সামনে। কিন্তু বাবা ফিরবে কিনা? জানেনা লাবিব।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিউইয়র্কের ওজন পার্কের সিটিলাইনে মসজিদ আল আমান’র সামনে বাংলাদেশী মুদাচ্ছির খন্দকারের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে তাঁর শিশু পুত্র লাবিব খন্দকার উপস্থিত হলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সমাবেশে তখন বক্তব্য রাখছিলেন মুদাচ্ছিরের ছোট ভাই অনিক খন্দকার। 

এসময় কমিউনিটি এক্টিভিস্ট খায়রুল ইসলাম খোকনের কোলে চড়ে সবার সমানে আসেন ছোট্ট লাবিব। বক্তৃতারত  অশ্রুসজল চাচা অনিক খন্দকারের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা আর স্লোগান শোনার মধ্যে ঘোরে পড়ে যায় এই শিশু। তখনো হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি কেনো এতো প্রতিবাদ? কিংবা বাবা ফিরবে কিনা? 

৩-৪ মিনিট যতক্ষণ সমাবেশস্থলে ছিলেন লাবিব ততক্ষন শোকতুর করেছেন উপস্থিত সবাইকে। এসময় জেএফকে এয়ারপোর্টে কর্মরত মুদাচ্ছির খন্দকারের সহকর্মীদের অনেকেই ঢুকরে উঠেন। বিশেষ করে কাউন্সিলওম্যান স্যান্ডি নার্স’র আবগেঘন বক্তৃতার সময় কান্না সংবরন করতে পারেননি সহকর্মী এম এ গফুর খান। 

কিছুক্ষন পর দেখা যায় তিনি মসজিদের উল্টা দিকেই ২০০ ফরবের স্ট্রিটের মুদাচ্ছিরের বাসার সামনে লাবিবকে কোলে করে দাঁড়িয়ে আছেন। মঙ্গলবার রাতে হত্যাকান্ডের পর বুধবার ভোরে খবর পাওয়ার পর থেকেই মুদাচ্ছিরের সহকর্মীরা পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

লাবিব খন্দকারের উপস্থিতি কমিউনিটির সবাইকে নাড়া দিয়েছে। ক্ষুব্ধ মানুষজন এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত জনপ্রিতিনিধি, রাজনীতিবিদ, কমিউউিনিট এক্টিভিস্ট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারে। শিশু লাবিব তাঁর পিতার হত্যার বিচার পাবে এমনটি প্রত্যাশা কমিউনিটির সবার।

প্রসঙ্গতঃ গত ৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার কিছুসময় আগে নিউইয়র্কের ওজনপার্কের সিটিলাইনে ২০০ ফরবেল স্ট্রিটের বাসার সামনেই নির্মমভাবে খুন হন বাসার বাসিন্দা প্রবাসী বাংলাদেশী মুদাচ্ছির খন্দকার (৩৬)। তিনি জেএফকে এয়ারপোর্টে চাকরি থেকে তখন বাসায় ফিরেন। নিজের গাড়ি পার্ক করে নামার সময় কাছ থেকে দুবৃত্তরা গুলি করে নিবির্ঘ্নে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে জ্যামাইকা হাসপাতালে নিলে তাঁর মৃত্যু হয়।


মন্তব্য লিখুন :