মুদাচ্ছির হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ
মুদাচ্ছির কে? আমাদের ভাই। মুদাচ্ছির কোথায়? আমাদের অন্তরে। ন্যায় বিচার চাই, এখনই। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা বন্ধ কর। আমাদের শহরকে বাঁচান। ইংরেজিতে এই বাক্যগুলোসহ অসংখ্য শ্লোগান উচ্চরিত হয়েছে দুবৃত্তের হাতে বাংলাদেশী মুদাচ্ছির খন্দকারের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। সমাবেশে চোখের জল আর ক্ষুব্ধ কন্ঠে বক্তরা হত্যাকারীকে দ্রুত আটক এবং বিচার দাবি করেছেন। সমস্বরে উচ্চারিত হয়েছে ‘নো গান ভায়োলেন্স’ ‘স্টপ হেট ক্রাইম’।
১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিউইয়র্কের ওজনপার্কের সিটিলাইনে মসজিদ আল আমান’র সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী অংশ নেন। সমাবেশে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, জনপ্রিতিনিধি, পুলিশের কর্মকর্তা, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এবং নিহতের পরিবারের সদস্য বক্তব্য রাখেন। এসবার সবার কন্ঠে ক্ষোভ ঝরে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপদ সিটি গড়া এবং মানুষের নিরপত্তার নিশ্চিত করতে অপরাধ দমনে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
পুরো সমাবেশ চলাকালে ক্ষুব্ধ মানুষের মুহুর্মুহু শ্লোগান প্রত্যক্ষ করে সিটি কাউন্সিল ও এসেম্বেলি মেম্বার এবং এনওয়াপিডির কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি সম্বলিত ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড শোভা পায় মানুষের হাতে।
খায়রুল ইসলাম খোকনের সঞ্চালনায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বোরহান উদ্দিন কফিল, কবির চৌধুরী, মিসবাহ আবদীন, মোহাম্মদ খান, হেলাল শেখ, ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নিউইয়র্ক স্টেট ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ডায়ানা রিচার্ডসন, এসেম্বেলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, ডিস্ট্রিক্ট ৩৭’র কাউন্সিল ওম্যান স্যান্ডি নার্স, ডিস্ট্রিক্ট ৩২’র কাউন্সিল ওম্যান জোয়ান আরিওলা, ডিস্ট্রিক্ট ৩৯’র কাউন্সিলি ওম্যান শাহানা হানিফ। এনওয়াইয়পিডি’র ব্রুকলিন নর্থের কমান্ডিং অফিসার জুডিথ হ্যারিসন, ডেপুটি ইন্সপেক্টর রোহান গ্রিফিথসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্য রাখেন মুদাচ্ছির খন্দকারের ছোট ভাই অনিক খন্দকার। এসময় মুদাচ্ছিরের শিশু পত্র লাবিব খন্দকারও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ক্ষুব্ধ কন্ঠে বক্তারা বলেন- শুধু অভিবাসী, শুধু মুসলিম, শুধু সংখ্যালঘু? এসব কারণেই মুদাচ্ছির হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। খুনীদের গ্রেফতার, হেইট ক্রাইম ও গান ভায়োলেন্স মুক্ত নিরাপদ কমিউনিটি সবার নাগরিক অধিকার। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সভা করে যৌথ রেজুলেশন মেয়র অফিস এবং এনওয়াইপিডিতে প্রেরণ করবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত এবং খুনীদের গ্রেফতারের দাবী জানাই।
সাবেক ডিটেক্টিভ ওয়ালিউর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন- সিটি কার? ক্রিমিনালের নাকি নাগরিকদের? অথচ ক্রিমিনাল হেঁটে বেড়াই কউিনিটিতে আর নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। প্রতিদিন মানুষ মরে। সিটি কাউন্সিল কি করে? সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।
মুদাচ্ছির খন্দকারের ছোট ভাই অনিক খন্দকার বলেন- বাবা, মা, তিনি, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা আমরা মরে গেছি এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ দুনিয়াতেই ঘাতকের শাস্তি দিবেন।
সিটি কাউন্সিলওম্যানবৃন্দ মেয়র এরিক এডামস্’র বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- মুদাচ্ছির হত্যাকান্ড এবং গান ভায়োলেন্স একটি নীল নক্সার অংশ। মেয়রসহ আমরা সেটি মনে করি। আমরা শোকাহত বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছি। কমিউনিটিতে বসবাসরত সকল মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে গান ভায়োলেন্সকে রুখে দিতে হবে। যতো দ্রুত সম্ভব এই হত্যাকান্ডের বিচারে কমিউনিটির পাশে থাকবেন তাঁরা।
দুই এসেম্বলিওম্যান বলেন- আমরা ব্রুকলিনে আর একটি প্রাণও হারাতে চাইনা। গান ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আলবানিতে এনিয়ে আমরা কথা বলবো সেখানে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি তুল ধরা হবে। মুদাচ্ছিরের পরিবার একা নয় তাঁদের সাথে আমরা আছি।
এনওয়াইপিডি’র দুই কর্মকর্তা বলেন- আজকের দিনটি (১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার) সুন্দর দিন নয়। আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। আমরা যৌথভাবে থাকতে চাই। আমরা কোন গান ভায়োলেন্স চাইনা। অপরাধীকে খোঁজা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।