নাড়ির টানে কন্ঠে উদ্বেগ

পরিবেশ বিনাশী কার্যক্রম রুখতে হবে

বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।

গত ৭জুন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে্ প্রথমআলো ফাউন্ডশনের আয়েজনে এই মতবিনিময় সভায় সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা সুরমা-কুশিয়ার-খোয়াই-মনু নদীর দূষণ, দখল এবং নাব্যতা সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন বাস্তবে সেটি দেখছে সিলেটবাসী।  দেশে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বেগ নিয়ে লিখেছেন রুদ্র মাসুদ।

আমাদের পাহাড়, টিলা কমে সমতলে পরিণত হচ্ছে। নদীগুলো শিল্পবর্জ্যে প্রাণ হারিয়ে ফেলছে। দখলদারদের কবলে পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী, সামন্য বৃষ্টিতেই দু’কুল উপচে প্লাবিত করছে জনপদ। একসময়ের প্রমত্তা অনেক নদী এখন পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। কমে যাচ্ছে পুকুর, জলাশয়। আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের জীববৈচিত্র। মেগা প্রকল্পের নামে বন ধ্বংস, কৃষি ভরাট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা আর বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। যার ফলস্বরূপ বিপর্যয় নেমে আসছে পরিবেশে। স্বাস্থ্যহানী, খাদ্য সংকটের মতো ঝুঁকি তৈরী করছে দেশের মানুষের। প্রতিনিয়তই পরিবেশ ধ্বংসের অপচেষ্ট রুখতে পদক্ষে কে নেবে?

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাঙালীদের শাহবাগ খ্যাত জ্যাকসন হাইটের ডাইভারসিটি প্লাজায় মুনলাইট রেস্টুরেন্টে প্রথম আলো ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেছেন প্রবাসীরা। নাড়ির টানে পরিবেশ নিয়ে এমন উদ্বেগের কথাগুলো বলেছেন নানা শ্রেণী পেশার প্রবাসীরা। সভা আয়োজনে সহযোগীতা করেছেন রিয়েল এস্টেট কনসাল্টেন্ট সেলিনা উদ্দিন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী।

সভার মধ্যমনি বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানকে ঘিরে সভায় দেশের মাটিতে বড় হওয়া মানুষগুলো দেশাত্মবোধ থেকেই পরিবেশ রক্ষায় তাঁদের মতামত দিয়েছেন। পরিবেশ বিনাশী যে কোন কর্মকান্ড রুখে দিতে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের কার্যকর প্রয়োগের কথা বলেছেন কেউ কেউ। একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় লোকায়ত জ্ঞানের ব্যাবহার চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। 

অংশগ্রহণকারীদের বেশীরভাগই সিলেট অঞ্চলের হওয়া বারবার উঠে এসেছে সুরমা-কুশিয়ারা, খোয়াই এবং মনু নদীর নাব্যতা সংকট এবং দখলদারদের কবলে পড়ে ভরাট হওয়ার বিষয়টি। যার ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানি ডুবিয়ে দিতে পারে নদীগুলোর দুই তীরের জনপদ। এমন আশংকা কন্ঠে ধ্বনিত হয় সিলেটের প্রবাসীদের। উঠে আসে বুড়িগঙ্গা দূষণের ভয়াবহতাও। আলোচনায় স্থান পায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী সরিয়ে নেয়ার পরও ঘুরেফিরে ট্যানারী বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ার বিষয়টি।

বাদ যায়নি সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশত মানুষের প্রাণহানী এবং ক্যামিকেল মুজদের বিষয়টিও। দাবি উঠেছে রেমিটেন্সের যোগানদাতা প্রবাসীরা বিশেষ করে নারী যাত্রীরা বিমান বন্দরে নেমে শৌচাগার ব্যবহারে নাজুক পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তা থেকে পরিত্রানেরও। পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে শহর-গ্রামে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ গড়ে তোলা এবং যেগুলো আছে সেগুলো দখল ঠেকানোর কথা।

কেউ কেউ তুলনা করেছেন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে উন্নত দেশগুলোর পদক্ষেপের সাথে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন একদিকে যেমন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায় তেমনি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপা’র সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপারর্স এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। তাঁদের সভার উদ্দেশ্যে প্রবাসীদের বক্তব্য ছিলো যেনো দেশে বিভিন্ন কর্মসূচীতে যেনো এই উদ্বেগের কথাগুলো তুলে ধরা হয়। একইসাথে সমাধানে সরকারের কাছে দাবি তোলে।

অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের ডেপুটি কমিশনার দিলিপ চৌহান এবং নিউজার্সির ফ্রাংলিন টাউনশিপ সিটির কাউন্সিলওম্যান সেপা উদ্দিন। সভায় অংশ নেয়াদের মধ্যে অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসীরা ছিলেন।

দুই অতিথি দিলিপ চৌহান এবং সেপা উদ্দিনও বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাস্তবতা। তাই পরিবেশ রক্ষায় এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় সমন্বিত ও কার্যকর পক্ষেপের কথা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান- সবার বক্তব্যের নোট থেকে উদ্বৃতি দিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন জলবায়ু পরিবর্তন একটি ন্যায্যতার ইস্যু। আমরা চাইলেও নদী বা পহাড় বানাতে পাবোনা। আমরা শিল্প কারখানা বানাতে পারি। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, জীবন মানের প্রবৃদ্ধির জন্য টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। 

সভার শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা পরিবারের সদস্যরা। ফ্রাংলিন টাইনশিপে পক্ষ থেকে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হাতে সম্মাননা তুলে দেন কাউন্সিলওম্যান সেপা উদ্দিন।


মন্তব্য লিখুন :