ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অ্যালাবামায় প্রদর্শিত হবে 'একটি দেশের জন্য গান'

সংগীত, ভালোবাসা কতটা সুদৃঢ় মতামত তৈরি এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে রেখা টেনে দিতে পারে তাঁর অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়া দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনের সেই কনসার্টের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত প্রামান্যচিত্র ‘একটি দেশের জন্য গান’র বিশেষ প্রদর্শনী হবে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অ্যালাবামায়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা রাজ্যের মবিল শহরে অবস্থিত ক্যাম্পাসের কমিউনিকেশন বিল্ডিংয়ে (কক্ষ নাম্বার-সিবি ১৬০) আগামি ১২ সেপ্টম্বর সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন। প্রামান্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন সাংবাদিক-লেখক তথ্যচিত্র নির্মাতা শামীম আল আমীন।
প্রদর্শনী আয়োজন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন, ডিপার্টমেন্ট অব হিস্ট্রি, ডিপার্টমন্টে অব পলিটিক্যাল সায়েন্স এন্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ প্রোগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের একটি দিক সম্পর্কে জানবে প্রামান্যচিত্রটির মাধ্যমে। এতে করে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস জানার পাশাপাশি শুধুমাত্র অস্ত্র নয় সংগীতও যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে সেটিও জানবে তাঁরা। সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে নির্মার্তার কাছে জানার সুযোগ থাকবে শিক্ষার্থীদের।
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশে’র সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে গত বছরের ০১ আগস্ট নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে প্রামান্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। কনসার্টে অংশ নেয়া সংগীতজ্ঞদের স্বজন, কনসার্টের প্রত্যক্ষদর্শী, মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকান বন্ধুসহ উপস্থিত বাংলাদেশীদের মাঝে আবেগ সঞ্চার করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসামান্য উদ্যোগ নিয়ে নির্মিত এই প্রামান্যচিত্র। পরবর্তীতে নিউইয়র্ক এবং ফ্লোরিডায় একাধিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া তুরস্কের আঙ্কারা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয় এটি। ভারতের মুম্বাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত ডকুমেন্টারি, শর্ট ফিকশন এবং অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পায় ‘একটি দেশের জন্য গান’।
চলতি বছরের ২২ জুলাই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় প্রামান্যচিত্রটি। এনিয়ে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) প্রদর্শিত হয়। প্রামান্যচিত্রটি জাতীয় সংগ্রহশালা (ন্যাশনাল আর্কাইভ) হস্তান্তর করেন নির্মাতা।
শুধুমাত্র সংগীতজ্ঞদের আহবানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের সমমর্মীতা নিয়ে নির্মিত এই প্রামান্যচিত্র দর্শক এবং সাধারণের মাঝে আগ্রহ তৈরী করে। আগামি প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিরোধীতাকারী দেশ। সাংবাদিক শামীম আল আমিন সেই কনসার্টে অংশনেয়া দর্শক, প্রত্যক্ষদর্শী এবং সংগীতজ্ঞদের স্বজনদের স্বাক্ষাৎকারের পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ নিয়ে গবেষণার আলোকে নির্মাণ করেন Song for a country তথা একটি দেশের জন্য গান।
আর্ন্তাজাতিক পর্যায়ের এরকম একটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে আনন্দের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সাংবাদিক-নির্মাতা শামীম আল আমিন। তিনি বলেন- ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অ্যালাবামা’র চারটি বিভাগ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এধরণের অংশগ্রহণ কাজের স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিশ্ববাসীর জানা। তারপরও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সুপরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা প্রামান্যচিত্রটি দেখে জানবে সংগীত কতোটা ধারালো অস্ত্র হিসাবে মানুষের পক্ষে কাজ করতে পারে। তাঁরা প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমেও জানতে পারবে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ সম্পর্কে। একজন বাংলাদেশী হিসাবে এটি তাঁর জন্য গর্বের।
প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শীর্ষ বিরোধীতাকারী দেশ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানুষের ওপর পাকিস্তানী সেনাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ বর্বরোচিত কর্মকান্ডে তখন ফুুঁসে উঠে বিশ্ববিবেক। তখন ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সেতার শিল্পী পন্ডিত রবিশঙ্কর তার বন্ধু জর্জ হ্যারিসনকে অনুরোধ করেন বাংলাদেশে মানুষের পক্ষে জনমত ও তহবিল গঠনে একটি সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট দুপুর ২.৩০ মিনিটে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেন প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। কনসার্ট থেকে সংগৃহীত প্রায় আড়াইলাখ ডলার। যা ইউনিসেফের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য ব্যায় করা হয়।
প্রদর্শনীর স্থানের ঠিকানা হচ্ছে-
Room # CB160, Communication Building
University of South Alabama, 6021 USA Drive South
Mobile, AL-36619.
Time: 12 September, 2.30 pm