নিঝুম দ্বীপে শিক্ষকবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় !
শ্রেণী কক্ষে ধান, ছাগলের পাল
শ্রেণী কক্ষ থাকার কথা ছিলো শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকার কথা। দেশের সাধারণ চিত্র অনুযায়ী আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী। এসব হওয়ার কথা থাকলেও ঠিক উল্টোও আছে। শ্রেনী কক্ষে রাখা হয়েছে ধানের বস্তা, অন্য কক্ষে রাতে বাধা হয় ছাগলের পাল, ভবনের ছাদে শুকানো হয় সিদ্ব ধান। শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে স্থানীয়দের বিচরণে মুখরিত থাকে সারাক্ষণ। এটি নোয়াখালীর সর্বদকিক্ষেনের জনপদ নিঝুম দ্বীপের বাতায়ন কিল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র।
আশ্চর্যজনক হচ্ছে শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঠদান ,পরীক্ষা কিছুই হয়না এ বিদ্যালয়ে। ফলে প্রতিষ্ঠঅর মাত্র তিন বছরের মাথায় অনেকটা পরিত্যক্ত ভবনে পরিনত হয়েছে। অথচ উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা চাইলে পাশের ইউনিয়নে গিয়ে পাঠ নিতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত “বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় ১৫০০ বিদ্যালয় নির্মান“ প্রকল্পের অধীনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপের ৪নং ওয়ার্ডে ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের সময় দুজন শিক্ষককে ডিপুটিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা কিছুদিন পর বদলি হয়ে চলে যায়। শুরু থেকেই স্থায়ীভাবে কোন শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে।
বর্তমানে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা নামের বেসরকরী একটি এনজিও থেকে নিয়োগ পেয়ে ইয়াসমিন আক্তার নামের একজন শিক্ষক ১ম ও ২য় শ্রেনীর কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম কোনভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন। দুুটি শ্রেনীতে ১৫-২০ ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান দিচ্ছেন তিনি। ইয়াসমিন আক্তারের মতে- শিক্ষক না থাকায় গ্রামের অনেক শিশু এখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করছেন।
হতাশা ব্যাক্ত করে নিঝুম দ্বীপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাইফুল ইসলাম বলেন- হাতিয়া মূলভুখন্ড থেকে নিঝুমদ্বীপ শিক্ষায় অনেকটা পিছিয়ে তাই কতৃপক্ষ নিঝুমদ্বীপে বিদ্যালয়টি স্থাপন করে । নতুন এ বিদ্যলয়কে ঘিরে অনেকে বিদ্যালয়ের পাশে বসবাস গড়ে তোলে কিন্তু শিক্ষক না দেওয়ায় গ্রামের ছেলে মেয়েদের শিক্ষায় কোন কাজে আসেনি।
যেক’জন বিদ্যালয়মুখী হয়েছেন এমন একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অনুকূল পরিবেশ নেই । বিদ্যালয় ভবনে এলাকার অনেকে ছাগল বাধে, ধান মজুত করা ও ধান শুকানের কাজ করায় পড়া লেখা বিঘিœত হচ্ছে বলে জানান তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ হাতিয়া উপজেলা সদরের পাশাপাশি অনেক বিদ্যালয়ে ৬-৭জন করে শিক্ষক রয়েছে। অথচ এ বিদ্যালয়টি শিক্ষক শূন্য। উপজেলা সদর কিংবা পাশবর্তী ইউনিয়ন থেকে শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি ভালোভাবে চালাতে পারে।
জানতে চাওয়া হলে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাস বলেন- শিক্ষক স্বল্পতার কারনে এ বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না । তবে পাশবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া লেখা করতে পারে । আশা করছি জানুয়ারিতে কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি চালু করা যাবে।