দাদনদার-মৎস্য আড়তদারদের চাপ
লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় নির্বিচারে জাটকা ধরছেন জেলেরা
সংরক্ষণের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় নির্বিচারে জাটকা ধরছেন জেলেরা। এতে ‘আড়ত সংশ্লিষ্ট দাদনদারদের চাপ’ রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ জেলেদের। এদিকে মূল্য কম হওয়ায় কেনা-বেচার চলছে নদীর পাড়ে অনেকটা প্রকাশ্যই। যারফলে ইলিশ সংরক্ষণের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে, একইসাথে ইলিশ উৎপাদনেও ঘাটতির আশংকা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞেরা।
এদিকে জেলা মৎস কর্মকর্তা বলছেন, ১৯ দিনে ১২৬ টি অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত ১৭ টি। জাল জব্দ ১৪ লাখ মিটার এবং মামলা হয় ৪৩ টি। এসময় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৩৫ জেলা ও ১টি রেগুলার মামলা হয়েছে। প্রয়োজনে নামানো হবে র্যাবও। শুধু মৎস কর্মকর্তার বক্তব্য পর্যালোচনা করলেও সহজেই বুঝা যাবে লক্ষ্মীপুর উপকূলে জাটকা নিধনের চিত্র।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানায়, জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজার ৪ শত ৭২ জন জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। দুই মাসের জন্য প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজার ৪ শত ৭২ জন জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। দুই মাসের জন্য প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। ইতিমধ্যে জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা ২৪ হাজার তিন শত ৪৪ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা সরকারি ভাবে পাওয়া গেছে। জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে রায়পুরে। পর্যায় ক্রমে কমলনগর ও রামগতিতেসহ সদর উপজেলায়ও দেওয়া হবে।
জানা গেছে, মার্চ এপ্রিল ২মাস নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা সংরক্ষন ও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২মাস সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর নিষেধাজ্ঞা সময়ের দুই সপ্তাহ যেতেই প্রতিদিন লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় মেঘনায় দিনে ও রাতে নির্বিচারে চলছে জাটকা ইলিশ নিধন।
এ কারনে জেলেদের পুঁজি করে এ জেলার বিভিন্নস্থানের মত মেঘনার পার কমলনগরের মতির হাট,বাতির খাল,জনতা বাজার,লুদুয়া,রায়পুরের পুরান বেড়িতে চলছে নিধনকৃত জাটকার হাটবসিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছের আড়ৎ পরিচালনা। এসব আড়তে রাতে ও ভোররাতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জাটকা বিক্রি ঘটনায় জেলে প্রতিনিধিসহ স্থানীয় স্বপন বেপারী,লোকমান হোসেন,খাঁজ মোহাম্মদ জড়িত থাকায় হতাশ স্থানীয়রা।
জেলেরা জানান, সঠিক সময়ে জেলে খাদ্য সহায়তা না পাওয়াসহ দাড় ও দাদনকর্জের চাপে তারা মানছেন না সরকারি নিষেধাজ্ঞায় জেল-জরিমানা। আর তাদের দেখা দেখিতে জাটকা ইলিশ শিকারে প্রতিযোগীতায় নেমেছেন অনেক জেলে।
রামগতির আলেকজান্ডারের জেলে নিজাম জানান,্এখন নিষিদ্ধ সময়। সরকারি বরাদ্দের চাল না পেলেও তিনি মেঘনায় মাছ ধরতে যাননি। চলতি নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড এসময়ে নামমাত্র নদীতে অভিযান চালিয়ে কিছু নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল,জেলেসহ ইলিশ মাছ আটক করে। পরে জেল জারিমানা দিয়ে আবার ছেড়ে দেয়া হয় । উচ্ছেদ অভিযানের আগে আড়তসহ বরফকলগুলো বন্ধ করা হলে জেলেরা আর নদীতে নামতো না।
চর কালকিনি এলাকার জেলে আওলাদ হোসেন জানান, এ এলাকার অনেক জেলে তার মতো দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের টাকা পরিশোধের নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে মেঘনায় মাছধরতে নদীতে নেমেছেন। সরকার নদীর পাড়ের আড়তগুলো বন্ধ রাখলে কোন জেলে আর মাছধরতে নামতো না।
আড়তদাররা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে জেলে খাদ্য সহায়তা না দেওয়ায় তারা জেলেদের রক্ষায় আবারও অগ্রিম টাকা দিয়ে জেলেদের পার্শ্বে দাঁড়িয়েছেন। বন্ধ রেখেছেন আড়ৎ। নদীর পারে আড়ৎ নয় জেলেরা পাইকার ডেকে জাটকা বিক্রি করছেন।
কমলনগরের মতিরহাটে আড়ত ম্যানেজার ইস্রাফিল জানান, তিনি জনপ্রতিনিধি আলমগীর মেম্বারের বুড়ির ঘাটে আড়ত পরিচালনা করছেন। মার্চ এপ্রিল মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে বন্ধ রেখেছেন। তবে নদীর পাড়ে চট বসিয়ে আড়ত পরিচালনা করছেন অনেকেই।
ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য শাহা আলম জানান, অনেক টাকা জেলেদের জাল ও নৌকা ক্রয়ে দাদন দেওয়া হয়েছে। সে টাকা উত্তোলনে আড়তে মাছ ক্রয়ে দোষের কি। নদীতেতো নৌ-পুলিশ মাছ ধরছে দিচ্ছে আর টাকা নিচ্ছে। তাই নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বর্তে ইলিশ রোধে নির্দেশ মানছেনা এখানকার জেলেরা।
ক্ষুদ্র মৎস্য জীবি সমিতির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ ফোর্স পরিবর্তন করে নতুন ফোর্স পাঠিয়ে নদীতে নিষেধাঙ্গায় নামানো হলে জাটকা শিকার বন্ধ তৎপরতা বৃদ্ধি হতো। এখন তা নেই।
কমলনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস জানান,প্রতিদিনই নদীতে মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানে সিপ্ট এর ফাঁকে কিছু জেলে নদীতে মাছ শিকারে নামছেন। আটক করা হচ্ছে জেলেসহ নৌকা ও জাল। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন জানান, প্রয়োজনে নামানো হবে র্যাবও। জেলেদের পূর্ণবাসনের জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় করা হচেছ দ্রুত। দুই একটি বিচ্ছিন ঘটনাও ঘটছে। প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।