হাসাপাতালের শহর মাইজদীতে স্টেডিয়ামে কেনো অস্থায়ী হাসপাতাল ?
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ চিকিৎসা সেবা দিতে অস্থায়ী হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার আপতত কিছুটা হলেও অবসান হয়েছে। কোন বিকল্প না পেয়ে (!) নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ৩০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল করা হচ্ছে। এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র, সিভিল সার্জন ডা. মমিনুর রহমানের ফেসবুক পেজে চোখ বুলালেও এটির দেখা মিলবে। সিভিল সার্জন এই পোস্টে উল্লেখ করেছেন- আরো ৭০ বেড প্রস্তুত হচ্ছে জিমনেসিয়ামে। এছাড়া চর আলগী হাসপাতাল এ প্রস্তুত আছে ৩০ বেড । সোনাইমুড়ী অন্ধকল্যান চক্ষু হাসপাতাল এ প্রস্তুত আছে ৩০বেড। জনগণের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নাই । ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না।
বিভ্রান্ত হতে চাই না, আশাবাদী হতে চাই। কোন ধরণের ছলচাতুরি হলে সিভিল সার্জনকে দায় নিতে হবে, যারা পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছেন তারাও কিন্তু অধরা থাকার সুযোগ নেই। কারণ জেলা শহরের মানুষ সেইসব রাজনৈতিক নেতাদের চিনে। ইতোমধ্যে জেলায় মোট চারজনের শরীরে করেনা শনাক্ত হয়েছে এবং আক্রান্ত দুইজন মারা গেছে।
এরমধ্যে শতকোটি টাকা দামের প্রশ্ন হচ্ছে- একরাস্তার শহর থেকে হাসপাতালের শহরে পরিণত হওয়া মাইজদীতে এতোগুলো বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে স্টেডিয়ামের মতো অনিরাপদ জায়গায় কোনো এই অস্থায়ী হাসপাতাল করা হলো ? বেসরকারি হাসাপাতালের মালিকরা কেনো তাঁদের হাসপাতাল ব্যবহার করতে দিচ্ছেনা। এর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে কারা ? কারা বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরে পক্ষে ব্রোকারি করছে ? শহরের আবাসিক হোটেলগুলো থেকে কেনো অস্থায়ী হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরকম আরো অনেক প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে, কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়তো পেয়ে যাবেন এখানেই।
এপ্রসঙ্গ সিভিল সার্জন নিজে তাঁর ফেসবুক পেজে দুটি উত্তর দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে স্টেডিয়ামের অস্থায়ী হাসপাতালের জন্য সকল প্রস্তুতি অর্থাৎ- পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার, নার্স , মেডিকেল এসিস্টেনট, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার দের সমন্বয় এ রোস্টার তৈরি করা হয়েছে।সকলের থাকা,খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রয়েছে । ৪টি ডেডিকেটেড অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ মজুদ রয়েছে । তবে কোন আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই । সিভিল সার্জনের এই কথাটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। বেশীরভাগ মানুষ দ্বিমত করেছেন তাঁর দেওয়া ফেসবুক পোস্টেই। বর্তমানে তাঁর অবস্থা হচ্ছে উনুনে শূণ্য হাঁড়ি চাপিয়ে শিশুদের মন ভুলোনো গল্প বলে ঘুম পাড়ানো মায়ের মতো। নিচে একটি প্রমান থাকছে যুক্তির পক্ষে।
বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোতে ”ডিসি ও সিভিল সার্জনের সমন্বয়হীনতা” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে সিভিল সার্জনের বক্তব্যে সিভিল সার্জন নিজে স্বীকার করছেন বেরসকারি হাসপাতালগুলো দিতে রাজী হচ্ছে না মালিক পক্ষ। এনিয়ে নানামুখী তদ্বির রয়েছে। অথচ; সিভিল সার্জন গত ১১ এপ্রিল ডেডিকেটেড করোনা চিকিৎসা হাসপাতাল করার জন্য বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় প্রাইম হসপিটালের দ্বিতীয় ইউনিটি পরিদর্শন করেন প্রাইমের এমডি ডা. মাহবুবসহ। এই সহায়তার জন্য তিনি ডা. মাহবুবকে ধন্যবাদ দিয়েছেনও। এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেনো প্রাইম কতৃপক্ষ সরে দাঁড়ালো ? কেনো অন্য হসাপাতাল মালিকরা কোনো হাসপাতাল দিচ্ছে না ?
এই দুটি প্রশ্নের দুটি সরল উত্তর হচ্ছে- করোনায় আক্রান্ত হয় মারা যাওয়া রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার তথ্য গোপান করায় গত ১৩ এপ্রিল সিভিল সার্জন লকডাউন করেন প্রাইম হসপিটাল। এতে বিগড়ে যায় ডা. মাহবুব আর এই সুযোগটা নেন বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা। প্রথমদিকে সিভিল সার্জন বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও উপরের নির্দেশে লকডাউন করতে বাধ্য হন। এনিয়ে প্রাইমের পক্ষে তদ্বিরে নামেন স্থানীয় সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত একজন জনপ্রতিনিধি, শহরের একজন শীর্ষ নেতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে সামনের কাতারে থাকা একনেতাসহ হাফডজন নেতা। এসব নেতারাই তদ্বির করছেন বেসরকারি হাসপাতালের মালিক পক্ষের হয়ে। এসকল নেতার আশীর্বাদে লকডাউন মানেননি ডা. মাহবুব। পরদিন সিভিল সার্জনকে গিয়ে সেটি কার্যকর করতে হয়েছে। এসময় ভিডিও করতে গেলে একজন সাংবাদিকের সাথে রূঢ় আচরণ করেন প্রাইমের এমডি। পুরো বিষয়টি অবহিত আছেন সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।
এবার বলি স্টেডিয়ামে হাসপাতল নিয়ে সিভিল সার্জনের বক্তব্য কেনো গ্রহণযোগ্য নয় এবং কেনো সমালোচনা হচ্ছে কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। তিনি হাসপাতাল নিয়ে যে পোস্ট করেছেন সেখানকার কিছু মন্তব্য তুলে ধরতে চাই- কামাল উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন- ধন্যবাদ, সিভিল সার্জন মহোদয়, "শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম হাসপাতালে" জরুরি সেবা দেয়ার মত নূন্যতম কোন যন্ত্রপাতি,ল্যাব, সার্জিকেল সামগ্রী, অপারেশন থিয়েটার, পর্যাপ্ত বাথরুম,পানি,ডাক্তারের রুম, নার্সের রুম, রিসিপশান, অফিস কক্ষ ইত্যাদি কিছুই আপনার পিকচারে (সিভিল সার্জনের পোস্টে) দেখা যাচ্ছে না।
আবু জাফর মোহাম্মদ হারুন লিখেছেন- নোয়াখালী হাসপাতালের শহর, এত এত হাসপাতাল থাকতে স্টেডিয়ামকে কেন হাসপাতাল বানাতে হলো...? দলদার হোসেন সুমন লিখেছেন -স্যার জেলা সদরের হোটেল গুলো প্রস্তুত রাখতে পারেন বিপদকালিন সময়ে ব্যবহার করার জন্যে। স্টেডিয়ামে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশন সুবিধা ছাড়া করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তবে; সিভিল সার্জন প্রতিউত্তর দিয়েছেন দু’একটি মাত্র। অথচ; হাসপাতাল মালিকদের কেউ গায়ে পড়েও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
উপরে উল্লেখ করেছিলাম সিভিল সার্জনের কথা বিশ্বাস করতে চাইনা। কেনো চাইনা সেটির পক্ষে মাত্র একটি উদারহণ দিচ্ছি। বৃহস্পতিবার ডা. আবু তাহের তাঁর ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত এটি শেয়ার হয় ৬১৫বার এবং ২২১জন মন্তব্য করেন। প্রবাসে নোয়াখালীর পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো। “ আমি নোয়াখালী ২৫০শয্যা সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন এ্যানেসথেসিওলজিস্ট।
রোগীর সবচেয়ে কাছ থেকে আমি চিকিৎসা দেই। গত ১ মাসে প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমিসহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ ১টিও n95/kn95/ffp2মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্হ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি n95 ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা বলতেছে? এই মিথ্যাচার এর শাস্তি কি হবে?
গত ১ মাসে আমার ডিপার্টমেন্ট এ ৮জনের জন্য ২টি পিপিই দেওয়া হয়েছে। এই হলো পর্যাপ্ত পিপিই মজুদ। ওহ কি বলবেন আমরা কাজ করিনা? গত ১মাসে ১৫০এর মত অপারেশন আমি একাই করেছি বাকিদের হিসাব দিলাম না। আপনাদের ওসব পিপিই মাস্ক না পেয়েছে আমরা বসে নাই বসে থাকবোও না কিন্তু জাতির সামনে মিথ্যাচার কেনো করবেন।। আমি নিজের বেতন এর টাকয় কিনা সার্জিকাল মাস্ক পরে প্রতিদিন অপারেশন করি। পিপিই নিজের টাকায় কিনা আছে ,অন্যরা না পরলে একা পরে কি হবে তাই পরি না।
৩মাস কি প্রস্তুতি নিয়েছেন ? এখন বলেন এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না? আমাদের অনেকে আজ আপনাদের এসব মিথ্যাচার এর কারনে আক্রান্ত। @ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এরকম অনেক মিথ্যা প্রস্ততির নাটক সাজিয়ে হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে কিছু লুটেরারা দল।”
আপনারা সিভিল সার্জনের কথায় ভরসা রাখলেও রাখতে পারেন। আমি পারছিনা, প্রিয় পাঠক লুটেরা চক্র নোয়াখালীতে করোনা পরিস্থিতিতেও সক্রিয়। সেটি পড়তে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।
স্টেডিয়ামের এই হাপাতাল নিয়ে এক ডাকসাইটে সাংবাদিকের সাথে কথা হয় কাল রাতে। প্রসঙ্গটি তুলতেই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে- তো কোথায় হবে হাসপাতাল ? আপনি আপনার বাড়ি দিবেন ? আপনার হাসপাতাল দিবেন ? আপনার হোটেল দিবেন ? নাম ধরে ধরে বললেন অমুক নেতা অমুক নেতা তদ্বির করে হাসপাতালগুলোর পক্ষে সিভিল সার্জন বা ডিসির কি করার আছে।
বললাম রাস্ট্র চাইলে জরুরী প্রয়োজনে যে কারো কাছ থেকে তাঁর স্থাপনা রিকুইজিশন করে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ কিংবা ভাড়া পেতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি। এবার আবার ক্ষেপলেন তিনি- বললে কে দিবে টাকা ? বললাম কেনো সরকার দিবে। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের কাছে আপদকালীন অর্থ থাকার কথা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের “এলআর ফান্ডের” কথা কে না জানে। একরাম চৌধুরী ফাউন্ডেশনও তো সহায়তায় এগিয়ে আসছে। অনেকে সেই ফান্ডে অর্থ জমা দিচ্ছেন। তাছাড়া শহরে অন্তত এককুড়ি নেতা আছেন যারা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন গত এক দশকে। যাদের অনেকের রিক্সাভাড়াও কর্মীদের দিতে হতো।
ক্ষুব্ধ সাংবাদিক বন্ধু ঘুমাবেন বলে আর কথা বাড়াননি। অল্প সময়ের কথোপকথন সম্পর্কে বলে শেষ করছি। জেলা শহরের যেকোন হাসপাতালকে সরকার ব্যবহার করতে পারে। এটিই অগ্রাধিকার, এরপর শহরের নামকরা আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে হতে পারে। বিআরডিবিতেও হাসপাতাল হতে পারে। এরকম বিকল্পগুলো মাথায় রাখা জরুরী। এগুলোতে বেড রয়েছে, কারণ পরস্থিতির দ্রুত অবনতি হলে তখন সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপন করা যাবে না। উপজেলা পর্যায়েও একইভাবে প্রস্তুতি রাখতে হবে দ্রুত। যদি প্রয়োজন হয়, সেই বিবেচনায়।
এবার আসি জরুরী প্রয়োজনে টাকা কে দিবে সেই প্রসঙ্গে। আমরা দেখেছি একরাম চৌধুরী ফাউন্ডেশনে কিভাবে স্বতঃস্ফুর্তভাবে মানুষ এগিয়ে এসেছে। যদিও অনেকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে সামনে রেখে, এবং আগামি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থ জমাদানের বিষয়টি প্রচার চালিয়েছেন। সেটি স্পস্ট।
সহজে একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গত ১১ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাসীন সময়ে ব্যায়বহুল কর্মসূচী ও আপদকালীন ব্যাক্তি সহায়তার বিষয়টি অকাতরে করেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। অথচ; একজনই পারেন এরকম একটা বেসরকারি হাসপালের খরছ দিতে, জেলা শহরে এরকম অন্তত দুই ডজন ব্যাক্তির আবির্ভাব হয়েছে শুধু একরামুল করিম চৌধুরী এমপি হয়েছেন বলেই। নাহয় ভাগাভাগি করতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করতেন। এই মানুষগুলো জাতির ক্রান্তিকালে পকেটে হাত দেন না কেনো ? আজ হয়তো আড়ালে আবডালে আছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণ ঠিকই জানবে আপনার অবস্থা।
বেসরকারি হাসাপতালগুলোর মালিক, আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোর মালিক পক্ষের সাথে জরুরী ভিত্তিতে বৈঠক করে হাসপাতাল তৈরী করা, অবসর প্রাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করা, প্রয়োজনী চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ নিশ্চিত করা, স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখার মতো কাজগুলোকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ থাকবে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী প্রতি। কারণ শুধু হাসপাতল নিয়ে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন প্রথম আলোর সাথে স্বাক্ষাৎকারে। প্রিয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর প্রতি অনুরোধ থাকবে তিনি প্রাইমের এমডির সাথে কথা বলে বেগমগঞ্জে প্রাইমের হসপিটালটি যেনো নেয়ার পদক্ষেপ নেন। আল্লাহ চাইলে এসবই সম্ভব।
আল্লাহ আমাদের সকল শুভ উদ্যোগের সহায় হোন।