কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জে চলাচলের অনুপযোগী পাঁচ সেতু, দুর্ভোগে মানুষ

দুই মাসের বেশী সময় আগে দেবে গেছে সেতুর দক্ষিণ অংশের একটি পিয়ার। তারপরই হেলে পড়ে পড়ে কিছু অংশ। এর সেতুর তদরকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুর ওপর থেকে স্টিলের পাতগুলো খুলে স্তুপ করে রেখেছে। অথচ; মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে যানবাহন এবং জনসাধারণের চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়ত করছে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
এটি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী চাপরাশি খালের ওপর নির্মিত চরএলাহী ষ্টীল সেতুর চিত্র। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহীর লাখো মানুষের উপজেলা সদর, জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এ সেতুটি। এছাড়া সুবর্ণচর উপজেলা ও সুন্দ্বিপ উপজেলার কিছু অংশের মানুষের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। কিন্তু দেখার কেউ নেই। সড়ক বিভাগ বলছে দ্রুতই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
একই অবস্থা কবিরহাট উপজেলার ধান শালিক ইউনিয়নের ওপর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চাপরাশি খাল ও আলগী খালের উপর নির্মিত আরো চারটি সেতুরও। কোনোটির অর্ধেক ভেঙে পড়ে আছে তিন বছর, কোনোটি পুরোটা ধসে গেলেও চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে অবশিষ্টাংশ, আবার কোনো কোনোটির দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ চারটি সেতু ধানশালিক ইউনিয়নের অংশে নির্মিত হলেও দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় ধানশালিকের বাসিন্দাদের চেয়ে সুফল বেশি পেতো চরএলাহীর বাসিন্দারা। কিন্তু সেতুগুলো ধসে ও ভেঙে পড়ায় দুই ইউনিয়নে কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এনিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ভাষ্য সেতু মেরমতে প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে চরএলাহী ষ্টীল সেতুর দক্ষিণ পাশের পাশাপাশি একটি পিয়ার নিচের দিকে দেবে কাত হয়ে যাওয়ার পর যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ সেতুর ওপরের ষ্টীলের পাতগুলো খুলে ফেলে। যারফলে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চাপরাশি খাল পারাপারে নৌকা একমাত্র বাহন। একটিমাত্রা নৌকা হওয়ায় পারাপারে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তা ছাড়া পন্য পরিবহন প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, চরএলাহী ইউনিয়নের প্রায় পঞ্চাশ হাজার বাসিন্দা ছাড়াও পাশ্ববর্তী সুবর্ণচর উপজেলার বাসিন্দারাও এই ব্রিজ দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত ধান, শাকসবজি, মাছসহ নানা কৃষি পন্য এবং বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল এই সেতু দিয়েই আনা-নেওয়া হত। এ অবস্থার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে আন্তরিক হলেও এখন গড়িমসি করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে কিন্তু কোনো সুফল আসছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নিয়ন্ত্রানাধীন চাপরাশি খাল ও আলগী খালের উপর নির্মিত আরো চারটি সেতুগুলো মেরামত না করায়ও মানুষের দূর্ভোগ বাড়ছে। স্থানীয়দের মতে এলজিইডির উদাসিনতার কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ধানশালিক ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান, সেতুগুলোর এ দশার কারণে প্রত্যেক সেতুর অংশে দুই পাড়ের মানুষ নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দিনে কোনোভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করলেও রাতে পড়তে হয় বেশি বেকায়দায়। এ কৃষক বলেন, উৎপাদিত ধান, সবজি পারাপারে অধিক মূল্য দিতে হচ্ছে। আর হয়রানির তো শেষ নেই। তাছাড়া রাতে কোনো মুমুর্ষ রোগী বা গর্ভবতীকে নিয়ে যাতায়াত করা শংকাজনক।
ধান শালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াকুব নবী জানান, সেতুগুলো পুননির্মাণের জন্য তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছেন। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। তবে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা কেউ বলতে পারেনি।
এনিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) থেকে সড়কসহ সেতুটি তারা পেয়েছেন। সড়ক উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষের দিকে। স্টীলের সেতুটির পাশেই নতুন সেতু নির্মাণ কাজও চলমান। তারপরও পুরোনো স্টীল সেতুটিকে মেরামত করে সাধারণ মানুষের চলাচল উপযোগি করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুটি খালের উপর ভেঙে যাওয়া ও ধসে পড়ার বিষয়টি অবগত রয়েছেন বলে জানালেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক। তিনি জানান, এ বিষয়ে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে; কবে নাগাদ এর বাস্তবায়ন হবে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।