প্রতিবন্ধিতাকে জয় করা এক বাঁহাতি পেসারের গল্প

অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর দৃঢ় মনোবল যে কোন বাধা দুর করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে- এটি প্রমান করেছেন বাঁহাতি বাঁহাতি পেস বোলার দিদার হোসেন। নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের দেবীপুর ইউনিয়নের তেইশ বছর এই তরুন শারিরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন। শুধু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজেই প্রমান করতে পারবেন প্রতিবন্ধিরা পরিবার, সমাজ কিংবা দেশের জন্য বোঝা নয়। এমন স্বপ্নের কথা শোনালেন নোয়াখালী ক্রীকেট একাডেমীর সদস্য অদম্য পেসার দিদার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- দেবীপুর গ্রামের হাফেজ সফি উল্যাহ’র সপ্তম ছেলে দিদার হোসেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মাইজদী পৌর বাজার জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। বয়স হওয়ার কারনে এবং  শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়াতে ২০১২ সালে তিনি ঐ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর থেকে গ্রামের বাড়ীতেই থাকেন। সংসাসের আর্থিক অবস্থা কোন সময়েই ভালো ছিল না। 

ডান হাতের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে ছোট ছেলে দিদার হোসেনের জন্মের পর টাকার পয়সার যোগান না থাকায় ছোট থেকেই সঠিক চিকিৎসা করানো যায়নি। কিন্তুু ছেলেকে তিনি এসএসসি ও এইচ এসসি পর্যন্ত পড়িয়েছেন হাফেজ সফি উল্যাহ। মা তাজনেহারও সামর্থ্য দিয়ে ছেলের পাশে ছিলেন।

শারীরিক বাধা দমিয়ে রাখতে পারেনি দিদারকে, ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিলো তাঁর। যার কারনে নিজে টিউশনি করে সে টাকা দিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাট বলসহ বিভিন্ন ক্রীড়াসামগ্রী কিনে এবং সংসারের জন্যও টাকা দেয়। 

একজন দিদারের সংগ্রাম, স্বপ্ন ও সাফল্যের কথা ছড়াচ্ছে চারদিকে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এনিয়ে খবর প্রচারিত হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ। স্বপ্নের সারথি হিসাবে আগামি সময়ে প্রধানমন্ত্রী, প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কাজ করে সুনাম কুড়ানো প্রধানমন্ত্রীর কন্যা, বিসিবি, জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে পাশে পেলে দিদার একদিন সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারে। আশার কথা হচ্ছে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু দিদারের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

যেভাবে দিদারের পথচলা-

গ্রামের পরিবেশে বেড়ে ওঠা দিদার শৈশব থেকে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কারণে আস্তে আস্তে খেলার নিয়ম কানুনগুলো রপ্ত করতে থাকেন। গ্রামের পাশের হাসানহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে চট্রগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। বর্তমানে তিনি উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় থেকে পুনরায় এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন।

এদিকে ক্রিকেট খেলার প্রতি তার ঝোঁকের কারণে নোয়াথালী ক্রিকেট একাডেমীর সদস্য হয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে এসে নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অন্যান্যদের সাথে প্র্যাকটিস করেন। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষনের জন্য ক্যাম্পে ছিলেন। ২০২১ সালে গোপালগঞ্জ স্পোটিং ক্লাব আয়োজিত টি-টেন খেলায় অংশগ্রহন করে এবং চলতি বছরে বিভাগ পর্যায়ে খেলেছিলো। 

দিদার হোসেন নোয়াখালী-ফেণী-লক্ষীপুর তিন জেলার একমাত্র প্রতিবন্ধি খেলোয়াড় । বাম হাতি পেসার বোলার হিসেবে সে দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলায় যথেস্ট সুনাম অর্জন করে। অথচ; সরকারের অথবা বিসিবি থেকে তেমন কোন পৃষপোষকতা না থাকায়  এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়াতে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তাছাড়া প্রতিবন্ধী দল হিসেবে তাদের দলকে ক্রিকেট বোর্ড এখনো কোন অনুমোদন দেয়নি তাদের ন্যাশনাল টিমকে। দিদার চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী হিসেব তাদের পাশে থাকার।

সতীর্থদের দাবি বাম হাতি পেস বোলার হিসেবে শারীরিক প্রতিবন্ধী দিদারের পাশে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া জরুরী।

ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ প্রসঙ্গে আবেগ জড়িত কন্ঠে হাফেজ সফি উল্যাহ জানান- তাঁর এ প্রতিভাবান সন্তানের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজের বিত্তবানরা একটু লক্ষ্য রাখলে সে তার সামনের দিন গুলো খেলায় পার করে দিতে পারবেন।

নোয়াখালী একাডেমী কোচ স্বদেশ মজুমাদর, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সালেহ আহম্মেদ বাবুলের কন্ঠেও ধ্বণিত হয় হাফেজ সফি উল্যাহ’র কথা। তাঁদের দাবি- প্রতিভাবান ও প্রতিবন্ধি এ ক্রিকেটার দিদার হোসেনকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে এবং ক্রীড়াপ্রেমী বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এক সময়ে দেশ ও দেশের বাইরের থেকে সুনাম অর্জন করে আনতে পারবেন। 

নোয়াখালী জেল ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে ক্রিকেটার দিদার হোসেনের সফলতার গল্প তার জানা ছিলনা। তিনি প্রথম জানতে পারলেন। তবে: এখন থেকে যা যা করার দরকার সংস্থার পক্ষ থেকে এবং নিজে তার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানান।


মন্তব্য লিখুন :