বছর ঘুরতেই এলজিইডি’র সড়কের বেহাল দশা
নোয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর -এলজিইডি’র অধিকাংশ সড়কই ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলায় ভাঙা ও গর্ত থাকা সড়গুলোতে পানি জমে জনচলাচলে দুর্ভোগ বাড়ে। প্রতি অর্থ বছরে একশ থেকে দেড়শ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হলেও বছর বছর না ঘুরতেই সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এলজিডির সড়কগুলের বেশীরভাগের এমন অবস্থা হলেও তাঁরা বলছে এমন অবস্থা ৪৫ শতাংশ সড়কের।
নিম্নমানের কাজ, অসময়ে সংস্কার এবং সঠিক তদারকির অভাবে সংস্কারের নামের সরকারের টাকা গচ্ছা গেলেও কমছেনা দূর্ভোগ। এনিয়ে কর্তৃপক্ষ দুষছেন অতিবৃষ্টি এবং অতিরিক্ত লোডের গাড়ি চলাচলকে। আর এ কারণেই নাকি সড়কগুলোর স্থায়ীত্ব টিকছে না। তবে; নোয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের কথা।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই ভাগে সংস্কার করা হয়েছিল জেলার সদর-সুবর্ণচরের সংযোগ সড়কটি। সোনাপুর থেকে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সুবর্ণচরের পাশাপাশি হাতিয়ায় যাওয়ারও অন্যতম সড়ক এটি। ১৯ কিলোমিটারের এ সড়কটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে এ সড়কের প্রায় পুরোটাই খানাখন্দকে ভরে গেছে। এতে সড়কে যানবাহনগুলো প্রায় বিকল হচ্ছে, পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে হচ্ছে যাত্রীরা। সাময়িকভাবে গর্তে ইট বিচিয়ে দূর্ভোগ লাগবের চেষ্টা করেই দায়িত্ব শেষ করছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে সড়কটি বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
একই অর্থ বছরে সংস্কার হয়েছিল জেলা সদরের সাথে কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের অন্যতম সংযোগ সড়ক মাইজদী বছিরার দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া সড়কটি। প্রায় ২০কিলোমিটারের এ সড়কটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই সড়কটিরও একই দশা, একটু বৃষ্টিতে পানি জমে পুকুরের মত হয়ে যায় সড়কটি। দুর্ভোগের শেষ নেই এ সড়কে চলাচলকারি যাত্রী সাধারণ ও যানবাহন চালকদের। নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি না থানায় অল্প সময়ে সড়কের বেহাল দশার কারণ।
শুধু এ দুটি সড়ক নয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা সংযোগ সড়কগুলোরই বেহাল দশা। উপজেলার আভ্যন্তরিণ বা গ্রামীণ সড়কগুলোর চিত্র আরও ভয়াবহ। সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে সড়কগুলো। সংষ্কারের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল হচ্ছে।
জেলা এলজিইডির তথ্য মতে জেলায় গত ১২ বছরে নতুন সড়ক উন্নয়ন হয়েছে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। সব মিলিয়ে বর্তমানে তাদের পাকা সড়ক রয়েছে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার। যার ৪৫ শতাংশের বেশি সড়ক চলাচল অনুপযোগি। যদি বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বল্প বরাদ্ধের মধ্য দিয়েও সংস্কার করছে তারা। পর্যায়ক্রমে এসব সড়ক সংস্কার করা হবে। তবে সড়ক উন্নয়নে মানসম্মত নির্মাণ সামগ্রী ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি অভিজ্ঞ ঠিকাদারের মাধ্যমে সড়ক সংস্কারের দাবী স্থানীয়দের। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
কালামিয়ার-পোল মাইজদী সড়কের দূর্ঘটনার শিকার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক সাহাব উদ্দিন জানান, রেললাইন থেকে কোন যাত্রী ছাড়া শুধু রিকশাটি নিয়ে তিনি আদর্শ স্কুলের সামনে আসতে ছিলেন। আদর্শ স্কুলের মোড়ের কাছাকাছি আসলে পানি জমে থাকা বড় একটি গর্তের মধ্যে পড়ে রিকশার সামনের অংশ ভেঙে যায়। রিকশার হ্যান্ডেলের চাপে আহত না হলেও পেটে ব্যাথা পেয়েছেন তিনি। শুধু তিনি নন প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে যাওয়ার সময় কোন না কোন রিকশা চালক এরকম দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবি রফিক উল্যা সুমন জানান, প্রতিদিন আদর্শস্কুলের সামনের সড়ক দিয়ে তাঁকে ৬বার আসা-যাওয়া করতে হয়। কখনও মোটরসাইকেল আবার কখনও অটোরিকশা যেতে হয়। এ দিয়ে চলতে গিয়ে ৩দিন অটোরিকশা বিকল হয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি। তাই সড়কটি দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোনাপুর-সুবর্ণচর সড়কের সিএনজি চালক সেলিম জানান, দিন দিন সড়কটির অবস্থা করুন হচ্ছে। আমাদের নতুন নতুন গাড়িগুলো স্বাভাবিকভাবে ১০ বছর চালাতে পারলেও এ সড়ক দিয়ে চলাচলের ১বছর পর গাড়ির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কয়েকদিন পর পর সকেটজবার, স্প্রিং ভেঙে যায়, এছাড়াও ভোগান্তির কারণে যাত্রীরা সিএনজিতে উঠতে রাজি হয়না।
এনিয়ে জানতে চাওয়া হলে নোয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক বলেন, ভাঙাচোরা সড়কগুলোর তালিকা করে তাঁরা পর্যায়ক্রমে কাজ করার চেষ্টা করছেন। বরাদ্দ কম হওয়ায় একসাথে সবগুলো সড়কের কাজ করা সম্ভব হয়না। তবে ব্যবহার অনুপযোগী ও মানুষের বেশি ভোগান্তি হচ্ছে ওইসড়কগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।