নোয়াখালীতে অ্যাফেরেসিস মেশিন স্থাপন ও প্লাজমা থেরাপি’র নিয়ে স্মারকলিপি

করোনা চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে ‘প্লাজমা থেরাপি’। বাংলাদেশ প্লাজমা থেরাপী প্রয়োগ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ববধায়নে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্লাজমা থেরাপি চালু হয়েছে, ফলও মিলছে ভালো। নোয়াখালীতে করোনা আক্রান্ত রোগীগের প্লাজমা থেরাপি দিতে অ্যাফারেসিস মেশিন স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ‘প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ নামের একটি স্বোচ্ছাসেবী সংগঠন।

নোয়াখালী অঞ্চলে মানব শরীর থেকে প্লাজমা গ্রহণ করার অ্যাফেরেসিস মেশিন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষপ না থাকায় এ অঞ্চলের প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য প্রচ্ছন্ন হুমকির মুখে বলে মনে করেন সংগঠনটি। এজন্য তাঁরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেছন। সংগঠনটি প্লাজমা ডোনার ও রিসিপিয়েন্টের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করতে কাজ করেন।

এদিকে প্লাজমা ডোনেট করেছন চাটখিল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম । এজন্য প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম তাঁকে অভিনন্দন জানায়। করোনা মোকাবিলায় শুরু থেকে মাঠে থেকে  নিজেই আক্রান্ত হোন (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাসে। সুস্থ্য হয়ে নিজেই প্লাজমা ডোনেট করলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। অপরদিকে সংগঠনের ৫৮ সদস্যের ১৭ জন মোট ২৭ বার প্লাজমা ডোনেশন করেন। এছাড়া প্লাজমা ডোনার সংগ্রমে করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীদের বাড়ি বাড়ি শুভেচ্ছা উপহার হিসাবে ফলের ডালা নিয়ে ধরণা দিচ্ছে টিমের সদস্যরা। 

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নোয়াখালীতে অ্যাফেরেসিস মেশিন ও প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত চিকিৎসায় আব্দুল মালেক উকিল কলেজে (আমাউমেক) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নোয়াখালী-০৪ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখার ও কোভিড-১৯, মেডিকেল করেজের মলিক্যুলার ল্যাবের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ ফজলে এলাহি খানঁ’র নিকট স্মারকলিপি পেশ করেন।

প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের এডমিন মুনীম ফয়সাল জানান নোয়াখালীতে অ্যাফেরেসিস মেশিন ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় দুটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রথমতঃ নোয়াখালী থেকে ডোনেট করতে হলে দাতাকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেতে হয়। লকডাউনের ফলে প্লাজমা ডোনেশনের পর দাতা নূন্যতম বিশ্রামও নিতে পারে না। যার ফলে নোয়াখালীতে সংক্রমিত রোগীর সুস্থ্যতা অনুসারে ডোনার সংগ্রহ ব্যহত হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ নোয়াখালীতে ডোনার ও রিসিপিয়েন্ট থাকলেও ঢাকা ও চট্টগ্রামমূখী চিকিৎসা সেবা হওয়ায় রোগীদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান নোয়াখালীতে অ্যাফেরেসিস মেশিন স্থাপন ও প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ। 

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস প্লাজমা ডোনেশন ও দাতা সংগ্রহে ‘প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘এই সংগঠনের সদস্যরা নোয়াখালীতে প্লাজমা ডোনেশন ও করোনা মহামারী প্রশমনে যেভাবে কাজ করছে তা অন্য তরুণদের জন্য বেশ অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। প্লাজমা গ্রহণ সংক্রান্ত মেশিন স্থাপনে তাদের চিন্তা ভাবনার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরবো, স্বাস্থ্য প্রটোকল অনুসারে এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

ডাঃ ফজলে এলাহি খানঁ বলেন ‘নোয়াখালীতে অ্যাফেরেসিস মেশিন স্থাপন সংক্রান্ত ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিমে’র দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক ও জনস্বাস্থ্য সম্পৃক্ত। আমরা নোয়াখালী মেডিকেল অথবা ২৫০ শয্যা মেডিকেল হাসপাতালে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সংগঠক ও সমাজকর্মী মিজান রহমান, সাইফ মনোয়ার বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রথম সারির প্লাজমা ডোনার ফখরুল ইসলাম অর্নব, প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের এডমিন এসএইচ রানা, রবিউল ইসলাম, সাখাওয়াত রাসেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গতঃ নোয়াখালীতে প্রশাসনের নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবীদের আরোগ্য লাভের প্রেক্ষিতে ‘প্লাজমা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে নোয়াখালীতে সুস্থ্য হওয়া অন্যান্য রোগীর সাথেও এ সংগঠনের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করে ডোনার বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। বর্তমানে এ সংগঠনের ৫৮ সদস্যের ১৭ জন মোট ২৭ বার প্লাজমা ডোনেশন করেন। 

মন্তব্য লিখুন :