চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশনে স্বেচ্ছাব্রতিদের আয়োজন
ভাসমান মানুষদের সম্মানে ‘ভালোবাসার ইফতার’
তপ্ত আবহাওয়া, ঠিকানাহীন জীবনে প্রশান্তির ইফতার কল্পনার সীমায়ও ঠাঁই মেলেনা। তারওপর দুর্মূল্যের বাজারে ন্যুনতম পছন্দের ইফতার কিনে খেতেই সারাদিনের রোজগারের বেশীর ভাগ ব্যায় হওয়ার উপক্রম। পবিত্র রমজানে এমন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে হলেও পছন্দের ইফতার সামগ্রী দিয়ে ভালোবাসার স্পর্শে গোছানো ইফতার দিনশেষে কস্ট ভুলিয়ে দেয়। ভাসমান মানুষগুলোও নির্ভরতা-আস্থার জায়গা খুঁজে পায়।
গত ক’বছরের ধারাবাহিকতায় নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানকারী ভাসমান মানুষদের সম্মানে ‘ভালোবাসার ইফতার’ আয়োজন করা হয়েছে । মানুষের প্রতি মমতা এবং ভালোবাসার জায়গা থেকে ‘মানবিক ইফতার’ শিরোনামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা গোলাপ’ প্রথম রমজান থেকে প্রতিদিন ১’শজনকে ইফতার করানোর লক্ষ্য নিয়ে এই কর্মসূচী চালু করেছে।
নিজেদের অর্থে তাঁরা কর্মসূচী চালু করলেও হৃদবান মানুষের সাড়া পেলে পুরো রমজানে কর্মসূচী এগিয়ে নিতে চান তাঁরা। আর সেটি সম্ভব হয়ছে কিছু উদ্যোমী যুবকদের প্রচেষ্টায়। আশার কথা হচ্ছে একইভাবে নোয়াখালীতে স্বেচ্ছাব্রতি যুবকদের ৬টি টিম ভাসমান মানুষদের মাঝে ইফতার পরিবেশন করবে। যারমধ্যে ৪টি টিম ৪টি স্থানে এবং দুটি টিম ভ্রাম্যমান।
প্রথম রমজানে আমরা গোলাপ’র স্বেচ্ছাসবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশনে ইফতার গ্রহণ করতে সবার সবার আয়োজন করে। ইফতার সামগ্রীর মধ্যে ছিলো খেজুর, পানি, ছোলাবুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি ও সরবত দিয়ে। কর্মসূচী সমন্বয়ক শাহেদ মুনীফ ফয়সাল, সাখাওয়াত রাসেল, ইয়াসিন রুবেল, মোঃ অন্তর, ইয়াসিন আরাফাত রানাসহ স্বেচ্ছাসেববৃন্দ ইফতার বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন।
আমরা গোলাপ’র স্বেচ্ছাব্রতিরা জানান- খেজুর, পানি, ছোলাবুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি ও শরবত দিয়ে প্রতিজনের জন্য ইফতার আয়োজনে খরছ হচ্ছে ৩৯ টাকা। ১’শ জনের জন্য ৩হাজার ৯০০টাকা। প্রথম রমজানে তাঁরা নিজেদের অর্থায়নেরই ইফতার সরবরাহ করেছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহবান করা হলে ইতোমধ্যে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। তাঁরা আশা করছেন কর্মসূচী এগিয়ে নিতে পারবেন। এবং চাহিদার আলোকে সরবরাহকৃত ইফতার সামগ্রীতে পরিবর্তনও হতে পারে।
এদিকে উদ্যোমী যুবকদের এমন মানবিক আয়োজনে সাড়া দিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হোসেন ৩৩’শ বোতল মাম বোতলজাত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেন।
ইফতার আয়োজনে অংশ নিতে ১’শ জনের জন্য ৩৯’শ টাকা প্রেরণ করা যাবে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে। স্বেচ্ছাসেবকদের বিকাশ নাম্বর হচ্ছে ফখরুল ইসলাম অর্ণব (বিকাশ পার্সোনাল) ০১৭৮১২২৯৮৬৫, সাখাওয়াত রাসেল ০১৮২২৩৭১৯৮৬। টাকা প্রেরণ করে সেটি নিশ্চিত এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা যাবে সাহেদ মুনীম ফয়সলের ০১৮৭৩৭০০২০০ এই নাম্বারে।
জানতে চাওয়া হলে আয়োজন সমন্বয়কারী সাহেদ মুনীম ফয়সাল বলেন- করোনাকালীন সময়ে লঙ্গরখানা চালুকে কেন্দ্র করে এই ভাসমান মানুষদের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয়। রেলওয়ে স্টেশনে রাত্রিযাপন করা কিংবা আশ্রয় নেয়া এই মানুষগুলোর জন্য ইফতারের আয়োজন ছিলো তৈরী হওয়া সম্পর্কের মানবিক বোধ থেকেই। তাই এবছরও স্বেচ্ছাব্রতি তরুন-যুবকদের আগ্রহেই শেষ পর্যন্ত ইফতারের আয়োজন করা। নিজেরা প্রথমদিন শুরু করলেও ক্রমেই সাড়া মিলছে। মহতি মানুষদের সহযোগীতায় পুরো রমজান কর্মসূচী চালিয়ে নেওয়ার আশাবাবদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গঃ এই স্বেচ্ছাব্রতিরা মহামারি করোনাকালীন সময়ে নিজেদের শ্রম-সামর্থ্যরে পাশাপাশি হৃদয়বান মানুষ ও প্রশাসনের সহযোগীতায় ভ্রাম্যমান লঙ্গরখানার মাধ্যমে ভাসমান মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করে এক’শ দিনেরও বেশী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচারণা, সচেতনতামূলক প্রচারণা, লকডাউন করা বাড়িতে খাবর পৌঁছে দেওয়াসহ ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ছিলেন। করেনায় আক্রান্ত হয়েও তারা দমে যায়নি। প্লাজমা ডোনেট থেকে শুরু করে করোনায় নিহতদের দাফনেও অংশ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকে।