সোনাইমুড়িতে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানকে হয়রানীর অভিযোগ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বারবার স্বনামে বেনামে দরখাস্ত দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানকে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে। তিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নির্বাচিত ডেপুটি কামান্ডার হিসাবেও ইতোপূর্বে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল(জামুকা) বরাবারে দরখাস্ত দিয়ে এরূপ হয়রানীর কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। 

এদিকে গত ১২ জুন অভিযোগের তদন্তে জামুকার সম্মেলন কক্ষে অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধাদের এবং অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিত থাকার জন্য পূর্বেই চিঠি ইস্যু করা হলেও অভিযোগকারী উপস্থিত ছিলেন না। এনিয়ে ক্ষুব্ধ একাধিক প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে হলে সেটি প্রমান করার দায়িত্বও অভিযোগকারীর। ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কারণে অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের এটি বন্ধ হওয়া উচিৎ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭১’র মার্চে ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পর অন্য অনেক সরকারি চাকুরের মতো আজিজুর রহমানও নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তখন তিনি পানি উন্নয়নবোর্ডে চাকুরি করতেন, তাঁর কর্মস্থল ছিলো টেকনাফের অদূরে শাহপরীর দ্বীপে। সেখান থেকে বাড়িতে পৌঁছে এলাকায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলেন এবং নিজে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের করেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি চাকুরিতে যোগ দিয়ে এককালীন বেতন উত্তোলন করেন।

সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রনয়নের উদ্যোগ নিলে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সাথে আজিজুর রহমানও ২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে সোনাইমুড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ডেপুটি কমান্ডার নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকেই তাঁকে হয়রানি শুরু হয়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা চুড়ান্ত হওয়ার পরও প্রাপ্ত অভিযোগের নিস্পত্তি করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রেরণ করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি। ২০২০সালে আজিজুর রহমানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ দেওয়া হলে তখন কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় প্রমানপত্র দাখিল করেন তিনি। কমিটি কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে কেন্দ্রে সুপারিশ প্রেরণ করে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের প্রকাশিত সমন্বিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়ও তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু; বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানীর উদ্দেশ্যে স্বনামে-বেনামে দরখাস্ত প্রেরণ অব্যাস্ত রয়েছে। 

জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সোনাইমুড়ী উপজেলার ৮জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন মর্মে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে অভিযোগ করেন ৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অভিযুক্তদের তালিকায় ক্রমানুসারে ৮ নাম্বারে রয়েছে আজিজুর রহমানের নাম। এই অভিযোগ তদন্তে ১২ জুন জামুকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তদন্ত কমিটিতে উপস্থিত ছিলেননা অভিযোগকারী। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের মতে মুক্তিযোদ্ধা নন এমন কেউ তালিকাভুক্ত হয়ে থাকলে তাঁকে বাদ দিতে হবে। কেউ অভিযোগ করলে তিনিই প্রমান করতে হবে। অহেতুক হয়রানীর জন্য কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা অনুচিৎ। 

মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান- তিনি সংগ্রাম কমিটি গঠন কওে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন এবং তাঁর বাড়িতে ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদেও অস্ত্রেও ভান্ডার। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি চাকুরিতে যোগদান করেন এবং ৯ মাস ১৩ দিনের বেতন তিনি একসাথে উত্তোলন করেন। তালিকাভুক্তির আবেদন এবং পরবর্তীতে যাচাই বাছাই কমিটির কাছে সকল প্রমান পত্র জমা দেওয়া হয়েছ, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের তালিকায়ও তাঁর নাম আছে। সম্মানহানী ঘটনোর জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। এনিয়ে তিনি আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।

প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা ও যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁঞা ও মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মাস্টার বলেন- ইতোপূর্বে অভিযোগের যাচাই বাছাইয়ের সময় মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান প্রয়োজনীয় প্রমানপত্র জমা দেওয়ার পর তাঁরা কেন্দ্রে মতামত পাঠিয়েছিলেন।

শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কিংবা দুরভিসন্ধী থেকে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানকে হয়রানী করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মাস্টার।

সোনাইমুড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার গোলাম মাওলা বলেন- দরখাস্ত দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে আজিজুর রহমানকে। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকালে তাঁর হাত দিয়ে কোন অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পায়নি বলে তিনি দাবী করেন। এনিয়ে তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মন্তব্য লিখুন :